× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নতুন শিক্ষা কাঠামোয় নানা চ্যালেঞ্জ

এক্সক্লুসিভ

পিয়াস সরকার
১৬ অক্টোবর ২০২১, শনিবার

বদলে যাচ্ছে শিক্ষা কাঠামো। কমছে পরীক্ষা ও বই। পরীক্ষা থেকে মূল্য বেশি থাকবে ধারাবাহিক মূল্যায়নে। কিন্তু এই কাঠামো সুচারুরূপে বাস্তাবায়নে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে বদলে যাবে শিক্ষার ধারা। বদলাবে বই, বইয়ের ধরন ও পরীক্ষা পদ্ধতি।

ঢেলে সাজানো হচ্ছে শিক্ষা কাঠামো। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত থাকছে না কোন পরীক্ষা।
দশম শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে না কোন বিভাগ বিভাজন ও পড়তে হবে অভিন্ন বই। ২০২৩ সাল থেকে হবে না পিইসি ও জেডিসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধুমাত্র দশম শ্রেণির কারিকুলামে। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষার মাধ্যমে হবে এইচএসসি’র ফল।

এ বছর থেকে শিক্ষা উন্নয়ন, শিখন-শেখানো সামগ্রী প্রণয়ন ও এবং পাইলটিং এর প্রস্তুতি। ২০২২ সালে হবে নির্বাচিত বিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রম ও শিখন-শেখানো সামগ্রীক পাইলটিং। ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কার্যক্রম প্রবর্তন। পরের বছর তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে প্রবর্তন। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম। ২০২৬ সালে একাদশ ও এরপরের বছর হবে দ্বাদশের প্রবর্তন।
এই কার্যক্রমে থাকবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন অর্থাৎ হবে না পরীক্ষা। ৪র্থ থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে পরীক্ষায় মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ। আর বাকি ৬০ শতাংশ মূল্যায়ন করা হবে শিখনকালীন সময়ে। আর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্পকলা এই বিষয়গুলোর মূল্যায়ন হবে শতভাগ শিখনকালীন সময়ে। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হবে ৬০ শতাংশ। আর বাকি ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন করা হবে শিখনকালীন সময়ে। জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই বিষয়গুলোর হবে না পরীক্ষা অর্থাৎ শতভাগ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন।

৯ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষায় মূল্যায়ন করা হবে ৫০ শতাংশ। আর বাকি ৫০ শতাংশ মূল্যায়ন করা হবে শিখনকালীন সময়ে। জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই বিষয়গুলোর হবে না পরীক্ষা অর্থাৎ শতভাগ হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। দশম শ্রেণি শেষে দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির উপর পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির আবশ্যিক বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৭০ শতাংশ। নৈর্বাচনিক বা বিশেষায়িত বিষয়ে কাঠামো ও ধারণায়ন অনুযায়ী সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক, ব্যবহারিক ও অন্যান্য উপায়ে শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে। প্রায়োগিক বিষয়ে অর্থাৎ প্র্যাকটিক্যাল বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির উপর প্রতিবর্ষ শেষে একটি করে পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হবে।

বর্তমানে চলমান শিক্ষাকার্যক্রম চালু হয় ২০১৩ সাল থেকে। নতুন কাঠামো দাঁড় করাতে মোকাবিলা করতে হবে নানা প্রতিবন্ধকতা। এতে ভাটা পড়বে কোচিং ব্যবসায়। পরীক্ষায় ভালো করার অসুস্থ প্রতিযোগিতার ফলে এই কোচিং সেন্টারগুলোতে পা দেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু পরীক্ষা ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় কোচিংগুলোর ব্যবসায় কাটতি কমবে। তবে বরাবরই বিশেষ করে শহরাঞ্চলে শিক্ষার্থী একগাদা বই ধরিয়ে দিয়ে চালানো হয় ব্যবসা। এই স্কুলগুলো বিরোধিতা করতে পারে এই শিক্ষা কাঠামোর।
‘স্যারের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মার্ক দেয় না’। এই অভিযোগ অনেক পুরনো। নতুন কাঠামোতে শিক্ষকদের বাড়ছে মূল্যায়ন ক্ষমতা। ফলে শিক্ষকদের প্রাইভেটের জন্য চাপ আরও বাড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। আবার শিক্ষকরা কীভাবে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন করবেন সেটার জন্যও চাই প্রশিক্ষণ। শিক্ষকরা কীভাবে কতোটা নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করছেন এই বিষয়েও চাই কড়া নজরদারি।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বনামধন্য চার স্কুলের শিক্ষকের দাবি নতুন কাঠামো বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ব্যাপক প্রশিক্ষণের কথা বলেন। আহসান হাবিব নামে এক শিক্ষক বলেন, আমাদের প্রাইভেট না পড়ালে শিক্ষার্থীদের মার্ক কম দেই- এটা হয়তো কিছুটা সত্য। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে আমার বেতন, মর্যাদাটার কথাও চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, নতুন কাঠামোটি অনেক ভালো। তবে এর জন্য প্রথমত: শিক্ষকদের বেতন বাড়াতে হবে। যাতে শিক্ষকদের প্রাইভেটমুখী না হতে হয়। সমালোচনা রুখতে ও সঠিক মূল্যায়নের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে একাধিক ট্রেনিংয়ের।

আবার প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান চারু ও কারু কলা বিষয় নিয়েও। নতুন কারিকুলামে রাখা হয়নি বিষয়টি। আইসিটি দেয়া হয়েছে অধিক জোর। বিভিন্ন শ্রেণিতে চালু করা হচ্ছে ট্রেড। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও পর্যাপ্ত শিক্ষক, প্রশিক্ষণ, ল্যাবরেটরি ও সরঞ্জামের অভাব শঙ্কার কারণ হয়ে উঠতে পারে। আর এই নতুন অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চাই অর্থ। আবার এই অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য চাই স্বচ্ছতা।

এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি পরীক্ষা কমানোর সিদ্ধান্তটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আমি একাধিকবার বলেছি অধিক পরীক্ষার ফলে আমাদের দেশে এখন পরীক্ষার্থী আছে, শিক্ষার্থী নাই। আইনস্টাইন বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের জীবনে দু’টোর বেশি পরীক্ষা থাকা উচিত নয়। পরীক্ষা বাড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। পরীক্ষা কমানোর সিদ্ধান্তকে আমি স্বাগত জানাই। এছাড়াও তিনি বিলম্বিত হলেও বোধোদয়ের জন্য সরকারকে অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, অবশ্যই নতুন কাঠামোতে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে- কেন আমরা ২০১০ সালের শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারলাম না, এটা আগে খুঁজে বের করতে হবে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন শিক্ষা কাঠামো বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর