ফুটবলের শহর মালে হঠাৎ থমকে গেছে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে ঘিরে এখানকার মানুষের যে উন্মাদনা ছিল, মালদ্বীপের বিদায়ে সেটা একেবারে কমে গেছে। গা থেকে নেমে গেছে লাল জার্সি। প্রতারিত পেনাল্টি গোলে বাংলাদেশের বিদায়ে প্রবাসীদের মাঝেও আগ্রহ নেই ফাইনাল নিয়ে। ফাইনালের টিকিট বিক্রিতেও সাড়া পাচ্ছেন না আয়োজকরা। এরিমাঝেই আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে মালের রাশমি ধান্দু স্টেডিয়ামে। যেখানে নেপালের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করতে তৈরি আছেন ভারতের সুনীল ছেত্রী। নেপাল কি পারবে ফাইনালে সুনীল ছেত্রীকে রুখে প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি ছুয়ে দেখতে।
সাফ গেমসের ফুটবলে একাধিকবার সোনা জিতেছে নেপাল। কিন্তু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে কেন যেন কখনোই শিরোপা জেতা হয়নি তাদের। এর আগে চারবার সেমিফাইনাল খেললেও কখনো ফাইনাল খেলতে পারেনি দেশটি। তবে এবার মালেতে দেখা গেছে, অন্য এক নেপালকে। যারা স্বাগতিক মালদ্বীপকে হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ৬ পয়েন্ট তুলে নেয়া নেপাল হেরেছে ভারতের কাছে। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে রুখে দিয়ে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে। অপরদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র দিয়ে আসর শুরু করা ভারত, পরের ম্যাচেও পয়েন্ট খুইয়েছে দুর্বল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। তবে শেষ দুই ম্যাচে নেপাল ও মালদ্বীপকে হারিয়ে ঠিকই তারা জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত সবশেষ আসরে খেলেননি সুনীল ছেত্রী, মানবীর সিংরা। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ফাইনালে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলো মালদ্বীপ। এবার সেই মালদ্বীপকে রাউন্ড রবিন লীগ পদ্ধতির শেষ ম্যাচে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। ওই ম্যাচে জোড়া গোল করে জয়ে অবদান রাখা সুনীল এবারো একাই টানছেন ভারতকে। মালদ্বীপ ম্যাচে জোড়া গোলসহ আসরে চার গোল করেছেন এই ভারতীয় ফরোয়ার্ড। ভারতের হয়ে ৭৯টি গোল করে ৪৮ ঘণ্টা আগেই পেলেকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু ভারত অধিনায়কের পাখির চোখ এই মুহূর্তে নেপালকে হারিয়ে অষ্টমবার দেশকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতানো। গতকাল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সুনীল বলেন, আমার দুর্ভাগ্য যে পেলের খেলার ভিডিও আমার কাছে খুব বেশি নেই। যতটুকু দেখেছি, তাতেই বুঝেছি যে পেলে ভয়ঙ্কর ফুটবলার ছিলেন। তবে ফুটবল সম্রাটকে পেছনে ফেলে দেয়া নিয়ে আলাদা কোনো অনুভূতি নেই। তবে আমি খুশি, গোল করতে পেরেছি বলে। আর মাত্র একটি গোল করতে পারলেই লিওনেল মেসিকে স্পর্শ করবেন সুনীল। সামনে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তবে এই দুই মহাতারকার সঙ্গে তুলনা করার কোনো অর্থই দেখছেন না ভারতের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। এনিয়ে তিনি বলেন, দেশের হয়ে গোল করতে আমি সব সময়ই ভালোবাসি। এটাই করে যেতে যাই।’ আপাতত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিয়ে ভাবলেও এশিয়ান কাপের মূল পর্বে যোগ্যতা অর্জন করাটাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন সুনীল। এশিয়ার সেরা দলগুলোর সঙ্গে খেলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ফুটবলজীবন হয়তো খুব দীর্ঘ হবে না। তার মানে এই নয় যে, কয়েক বছরের মধ্যেই অবসর নেবো। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৬১ ধাপ পিছিয়ে থাকা ফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে ভারতের এই মহাতারকা বলেন, এই প্রতিযোগিতার সেরা দল নেপাল। হয়তো আলি আসফাকের মতো একাই ম্যাচের রং বদলে দেয়ার মতো ফুটবলার ওদের নেই। রক্ষণ থেকে আক্রমণ নেপাল একটা দল হিসেবে খেলে।
সত্যিই তাই। সুনীল ছেত্রীর মতো হয়তো অত বড় তারকা নেই নেপালে। কিন্তু দল হিসেবে নেপাল সত্যিই ভয়ঙ্কর। এরিমধ্যে তারা সেটি প্রমাণ করেছে। দলটির ভরসার নাম গোলরক্ষক কিরণ লিম্বু। পুরো টুর্নামেন্ট শুরু থেকে অসাধারণ খেলেছেন। তবে নেপালের দুর্ভাগ্য ফাইনালে তারা পাচ্ছেন না বাংলাদেশ ম্যাচে ‘প্রতারিত’ পেনাল্টির নায়ক অঞ্জন বিস্টাকে। দুই হলুদ কার্ডের জন্য খেলতে পারছেন না এই ফরোয়ার্ড। কার্ড জটিলতায় ভারতেও দুইজন খেলতে পারবে না ফাইনাল। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় ডাগআউটে দাঁড়াতে পারবেন না ভারতীয় কোচ ইগার স্টিমাচ। নেপাল কী পারবে এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে প্রথমবারের মতো সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইতিহাস গড়তে। নাকি অষ্টমবারের মতো ট্রফি জিতে ফিরবে ভারত।
রোল অব অনারভারত: চ্যাম্পিয়ন ৭ বার (১৯৯৩, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৫, ২০০৯, ২০১১, ২০১৫) রানার্সআপ ৪ বার (১৯৯৫, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮)
মালদ্বীপ: চ্যাম্পিয়ন ২ বার (২০০৮ ও ২০১৮) রানার্সআপ ৩ বার ( ১৯৯৭, ২০০৩ ও ২০০৯)
বাংলাদেশ: চ্যাম্পিয়ন ১ বার (২০০৩) রানার্সআপ ২ বার (১৯৯৯ ও ২০০৫)
আফগানিস্তান: চ্যাম্পিয়ন ১ বার (২০১৩) রানার্সআপ ২ বার (২০১১ ও ২০১৫)
শ্রীলঙ্কা: চ্যাম্পিয়ন ১ বার (১৯৯৫) রানার্সআপ ১ বার (১৯৯৩)