গ্রহাণুদের সন্ধানে শুরু হচ্ছে নাসার নতুন মহাকাশ অভিযান। ১৬ অক্টোবর পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশের পথে রওনা দিল মহাকাশযান ‘লুসি’। গ্রহাণুদের পাশাপাশি সৌর পরিবারের প্রথম দিকের দিনগুলো কেমন ছিল, তার-ও খোঁজখবর নেবে লুসি। অভিযান চলবে ১২ বছর। সৌর পরিবারের বিভিন্ন প্রান্তে ‘তদন্ত’ চালাবে লুসি। সূর্যকে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করছে বেশ কিছু প্রাচীন গ্রহাণু। গ্রিক পুরাণ থেকে এদের নাম ট্রোজান। এই ট্রোজানদের খুঁটিনাটি সন্ধান করবে লুসি।
আমেরিকার ফ্লোরিডায় কেপ ক্যানাভেরাল থেকে ‘অ্যাটলাস ভি’ রকেটে চেপে ট্রোজানদের পাড়ায় যাওয়ার লক্ষ্যে মহাকাশে পাড়ি জমাল নাসার ‘লুসি’ মহাকাশযান। লুসি-ই প্রথম কোনও সৌরশক্তি চালিত মহাকাশযান যা কি না সৌরমণ্ডলে সূর্য থেকে এতটা দূরে যাচ্ছে। নাসা জানিয়েছে, ট্রোজান গ্রহাণুরা সৌরপরিবারের সূচনা থেকে রয়েছে। বিজ্ঞানীদের কথায়, গ্রহাণুগুলো হল ‘টাইম ক্যাপসুল’। দু’টি স্রোতে এরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। একটি স্রোত বৃহস্পতির আগে বেল্টের মতো রয়েছে। দ্বিতীয় স্রোতটি তার পিছনে। বলা হয়, সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির সঙ্গে একই পথে ঘুরছে ট্রোজান। লুসিই প্রথম মহাকাশযান, যে পা ফেলবে ট্রোজানদের সংসারে। টানা ১২ বছর ধরে বৃহস্পতির কক্ষপথের ওই পাড়ায় ৮টি ট্রোজান গ্রহাণুকে খুব কাছ থেকে চিনতে, জানতে, বুঝতে পারাটাই এখন লক্ষ্য লুসির । সেগুলির রং কেন কোনওটা লালচে হলে অন্যটা ধূসর বা কালো অথবা বাদামি, কেন সেই নানা রঙের খেলা ট্রোজানদের মুলুকে, সৌরমণ্ডল তৈরি হওয়ার সময় সোনা, প্ল্যাটিনাম, লোহা, নিকেল, কোবাল্টের মতো কী কী মূল্যবান মৌল দিয়ে সেগুলি গড়ে উঠেছিল, আর সেই সব মূল্যবান অথচ অতি প্রয়োজনীয় মৌলগুলি ট্রোজান গ্রহাণুগুলিতে কী পরিমাণে রয়েছে, তা জরিপ করতেই নাসার এই অভিযান। নাসার বিজ্ঞানী টম স্টেটলার বলেন, ‘লুসির সঙ্গে ১২ বছরে আমরা বিশ্ব সংসারের এমন জায়গায় যাব, যা আগে কেউ কখনও দেখেনি। আমাদের সৌরপরিবারের অতীত, ইতিহাস হয়তো এ বার জানা যাবে। মিলবে নতুনের সন্ধান। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ যখন দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার মুখে তখন ওই সব গ্রহাণু থেকে নানা ধরনের মূল্যবান মৌল নিয়ে আসা সম্ভব কি না, তা কী পরিমাণে পৃথিবীতে আনা সম্ভব হতে পারে, তা বুঝতেই লুসি যাচ্ছে ট্রোজান গ্রহাণুদের মুলুকে।
সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক