× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মাগুরায় ৪ খুনের নেপথ্যে চাঁদাবাজি-প্রভাব বিস্তার

এক্সক্লুসিভ

মাগুরা প্রতিনিধি
১৭ অক্টোবর ২০২১, রবিবার

মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়নে ৪ খুন হওয়ার ঘটনায় চাঁদাবাজি এবং গ্রাম্য প্রভাব ও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার প্রধানত  কারণ  হিসেবে পাওয়া গেছে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য বিবদমান দু’পক্ষের প্রার্থিতা নিয়ে এই খুন হতে পারে- বলছে  পুলিশ। তবে এর পেছনে নির্বাচনের খরচ যোগাতে চাঁদাবাজিও উঠে এসেছে। অন্যদিকে, এলাকায় ৪ খুনের ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ঘটনার পরে, বর্তমানে জগদল গ্রামটিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গ্রামের বিভিন্ন স্থানে উত্তেজনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান বলেন, এই ঘটনায় ঐ এলাকার সকলকে পুলিশের নজরদারিতে আনা হয়েছে। এখানে দু’টি পক্ষ হিসেবে রয়েছে ৩ নং ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলাম এবং গ্রাম্য মাতবর সবুর মোল্লা ও তার দুই ভাই।
এতে জগদল ইউনিয়নের আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ৩ নং ওয়ার্ড থেকে নজরুল আবারো নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন।  অপরদিকে একই ওয়ার্ডে তার বিপরীতে সৈয়দ হাসান নামে একজন মেম্বার প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। সবুর মোল্লা ও তার গ্রুপটি সৈয়দ হাসানকে সমর্থন দিলে তা নিয়ে কয়েকদফা সামাজিক বিরোধ সৃষ্টি করে আসছিল উভয়পক্ষ। পুলিশ মনে করছে, এই বিরোধ ঠেকাতে তারা সবসময় তৎপর এবং শুক্রবার ও ঘটনা শোনামাত্র পুলিশ ঐ এলাকায় পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই কর্মকর্তা জানান, মামলার প্রক্রিয়া চলছে। নিহতের পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি। তবে এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে, একই পরিবারে আপন দুইভাই সবুর মোল্লা ও কবির মোল্লাসহ চাচাতো ভাই রহমান মোল্লা নিহত হওয়ায় শোকের মাতম ঐ সকল পরিবারে। সরজমিন জগদলের দক্ষিণপাড়ায় নিহতদের বাড়িতে শনিবার সকালে গিয়ে দেখা যায় শতাধিক মানুষ স্বজনহারা পরিবারের পাশে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডে নিহত তিন ভাইয়ের বাড়ি। কবির মোল্লার মেয়ে চাঁদনী জানান, বাবার মৃত্যুতে আমরা দিশাহারা হয়ে গেছি। আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, আমার বাবা আর এই বাড়িতে নেই। তিনি বলেন, ঘটনার দিন বাবা পাশের বাড়িতে একটা দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরেন। এরপর আমরা সেখানে খেতে যাই। তখন বাড়ির পাশে রাস্তার ওপরে বাবাকে খুব চিন্তিত মনে হয়। হঠাৎ শুনলাম আমাদের বাড়ির সামনের মূল রাস্তার হাকিমের মোড়ে কারা যেন মারধর করছে। তখন বাবার ফোনে একটা কল আসে। বাবা সেই ফোন পেয়ে চলে যান। এরপর আমার বাবা আর জীবিত হয়ে ফেরেননি। গলাকাটা অবস্থায় আমার বাবাকে এলাকাবাসী হাকিমের মোড়  থেকে উদ্ধার করে।
সবুর মোল্লার ভাতিজা মাহফুজ ইয়াসিন বলেন- নজরুল মেম্বার কয়েকবার মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। তার স্বেচ্ছাচারিতা বেড়ে গিয়েছিল। তাই আমরা এর প্রতিবাদ করতাম। এতে তিনি আমাদের ভালো চোখে দেখেননি। নজরুল মেম্বার আগে বিএনপি করতেন। ২০১২ সালেও তিনি জগদল ইউনিয়নের বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন। পরে নিজের দল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মিশে যান। স্থানীয় চেয়ারম্যান রফিকুল হাসানের অন্যতম শক্তি এই নজরুল। নজরুল ছাড়া চেযারম্যানের কোন ক্ষমতা নেই। তিনি আরও বলেন, এবার  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাদের এলাকার ভোটার টানতে আমার চাচা সবুর মোল্লা মাতবরকে বলা হয়। আমার চাচা শান্তি চান তাই তাদের অন্যায় সহ্য করেও কিছু বলেননি। এতে নির্বাচনের খরচ যোগাতে আমার দুই চাচা অর্থাৎ নিহত সবুর ও কবির মোল্লাকে চার লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন নজরুল মেম্বার। তা দিতে না পারায় তারা আরও ক্ষেপে যান। এই নিয়ে এলাকায় কয়েকদফা  সালিশ বৈঠক হয়। এতে চেয়ারম্যান তাদের পক্ষ নেন। সবুর মোল্লার ভাস্তি মোছা: মুরশিদা বলেন, ২০০৩ সালে আমার বাবা জরিপ মোল্লাকে বাড়ির সামনে ভোরবেলা ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করেন এই নজরুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সবুর মোল্লা ও কবির মোল্লার আপন ভাই জরিপ মোল্লা। তিনি বলেন, সেই ঘটনায় নজরুল মেম্বারকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়। সেই মামলার সময় বিএনপি ক্ষমতায় ছিল এবং নজরুল তখন মেম্বারসহ ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক থাকায় মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করেন। তাই বাবার হত্যার বিচার আমরা আপসের মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলি। যদিও এটাতে  গোষ্ঠীর একটা বড় অংশের সম্মতি ছিল না। সবুর মোল্লার স্ত্রী মিলিনা খাতুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামী এলাকায় সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন সালিশ বিচার করতেন। সবাই সম্মান করতেন। এটাতে তার জনপ্রিয়তা ছিল। এজন্য বহু মানুষ আমাদের কথামতো চলতো। তাই ভোটের সময় এলে নজরুল মেম্বার আমাদের তাকে সমর্থন দিতে বলতেন। কিন্তু তারা চাঁদা দাবি করে এবার। গতবারও তারা নির্বাচনের আগে চাঁদা নিয়েছিল। না দেয়ার জন্য তারা এই খুন করলো। সেই খূনের সঙ্গে জড়িত এই নজরুল মেম্বার। সে ১৮ বছর আগেও আমার স্বামীর অপর ভাই জরিপ মোল্লাকে কুপিয়ে খুন করে। একই ঘটনায় এবার আমার স্বামী সহ তার আপন ভাই ও চাচাত ভাইকে আমরা হারালাম। ওদের সবার আমি ফাঁসি চাই। এদিকে গ্রামের অনেককেই বাড়ির মাল সামানা ভ্যানে নিয়ে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে।
জগদল ইউনিয়ন পরিষদ বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান,দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। তাই নিজেদের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জেরে এটা হতে পারে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী দেওয়া নিয়ে সেটা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে’।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল আলম (ওসি) বলেন, আমরা এই খুনের ঘটনাটি খুবই গুরুত্বসহকারে দেখছি। গতকালের পর থেকে এই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এলাকায় মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মামলা হলে সে মোতাবেক আমরা ব্যবস্থা নেবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর