করোনা মহামারি হরণ করেছে মানুষের স্বাধীনতা। চারদিকে ভয়ে দুরু দুরু মন। অজানা-অদেখা ছোট্ট অণুজীব কখন আক্রমণ করবে কারো জানা নেই। এরমধ্যে আইসিসি’র সাহসী উদ্যোগ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে বাংলাদেশ দল আছে স্বপ্ন নিয়ে। টাইগাররা ওমানে বাছাই পর্বের বাধা পেরিয়ে আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঐতিহাসিক শারজাহ্তে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যথারীতি বাংলাদেশের সংবাদকর্মীরা হাজির সেখানে। এক সময় শারজাহ্তে ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ টিভিতেই দেখা হয়েছে।
আর সেই ভেন্যুতে সশরীরে হাজির হয়ে মন হয়ে ওঠে আবেগাপ্লুত। তবে সেই আবেগী মাঠে খুব বেশি থাকার সময় হয়নি কারো। আইসিসি’র করোনা শতর্কতার কড়াকড়িতে মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাচের আগের দিন বের হয়ে আসতে হয়। যা করোনার আগে ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল ঘটনা বললে ভুল হবে না। সবশেষ ১৯৯৫-এ বাংলাদেশ দল এ মাঠে খেলেছে। ২৬ বছর পর আবারো রানের মায়াবী শারজাহ্তে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। গোটা দলে আইপিএল-এ খেলার সুবাদে এই মাঠে চেনেন শুধু সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের পরামর্শই হবে দলের সবার জন্য হাতিয়ার।
১৯৮০ সালের প্রথমদিকে নির্মিত হয়েছিল এবং অনেক বছর ধরে আরও উন্নত করা হয়। ২০১০ সালে স্থানীয় ক্রিকেট পৃষ্ঠপোষক আব্দুল রহমান বুখাতির আদেশে শারজাহ্ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একদিনের আন্তর্জাতিক এবং প্রথম শ্রেণির ম্যাচের জন্য আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের জন্য স্থানীয় মাঠে পরিণত হয়। ১৯৮৪ এবং ২০১৭ সালের মধ্যে শারজাহ্র মাটিতে মোট ২৩১টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। সবচেয়ে বেশি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এ মাঠে। আবুধাবি ও দুবাই স্টেডিয়ামের যা চরিত্র, শারজায় সেটারই বিপরীত। সেই কারণেই প্রথম প্রথম আইপিএল’র ম্যাচ খেলতে নেমে যে কোনো দলের নেতা ভুল করে বসছিলেন। তাঁদের মনে হয়েছিল, দু’টি স্টেডিয়ামে যেমন টসে জিতলে প্রথমে ফিল্ডিং নিলে ভালো, তেমনটাই হয়তো শারজাহ্র ক্ষেত্রেও হবে। কিন্তু হয়েছে তার বিপরীতটাই। যেমন কেকেআর অধিনায়ক দীনেশ কার্তিকই টসে জিতে এখানে আগে ফিল্ডিং নিয়েছেন। শারজাহ্র ক্ষেত্রে টসে জিতলে আগে ব্যাটিং নিয়ে পাটা উইকেটে ২২০ রান তুলতে পারলেই বিপক্ষ দলকে চাপে ফেলা যাবে। এটাই সহজ সমীকরণ।
শারজাহ্ স্টেডিয়াম মানেই অতীতের নানা ঘটনার সমারোহ। চেতন শর্মার বোলিংয়ে জাভেদ মিয়াঁদাদের সেই শেষ বলে ছয়। কিংবা শেন ওয়ার্নের বলে শচীন টেন্ডুলকারের মরুঝড়। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, আগে শারজাহ্র মাঠের বাউন্ডারি লাইন আরও বড় ছিল। কিন্তু মাঠ সংস্কারের পরে এখন সীমানায় টান পড়েছে। বরাবরই শারজাহ্র মাঠের পিচ রানের খনি। পাটা উইকেটে ব্যাটিং মানেই বোলারদের কাছে আতঙ্কের। শারজাহ্র এই পিচের মাটি অবশ্য আনা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। কারণ আরবের মাটিতে পিচ তৈরি করা যায় না। তাই শুরু থেকেই শারজাহ্র মাঠ তৈরিতে অনেক খরচ হয়েছে ওই দেশের ক্রিকেট সংস্থার।
করোনার কারণে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পুরোটা সময়ই বাংলাদেশ দল অবস্থান করবে দুবাইয়ের হোটেলে। সেখান থেকেই ৫ টি ম্যাচ খেলবে শারজাহ্, আবুধাবি ও দুবাইয়ের ভেন্যুতে। গতকাল টাইগাররা ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছে ভেন্যুতে অনুশীলনের জন্য। দুপুর দেড়টায় সংবাদ সম্মেলন তাই পিছিয়ে শুরু হয় দু্ইটা বাজে। সেখানে রাসেল ডমিঙ্গোও এই মাঠের রানের ইতিহাস নিয়ে আপ্লুত। তিনি বলেন, ‘ মাঠ ছোট তাই আমাদেরও সুবিধা আছে। কারণ আমাদেরতো খুব বেশি পাওয়ার হিটার নেই। ছোট মাঠে তাই সুযোগ বেশি বেশি রান তোলার।’
১৯৯৫ সালে শারজাহ্তে বাংলাদেশ দল খেলেছিল পেপ্সি এশিয়া কাপ। সেই দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে আজও টাইগারদের সঙ্গে থাকবেন আতহার আলী খান। অবশ্য তিনি থাকবেন ধারাভাষ্যকার হিসেবে। সেই সময় সব মিলিয়ে পাঁচটি এশিয়া ম্যাচ খেলেছিল। এরপর আর কখনোই খেলার সুযোগ আসেনি। টাইগার ভক্তদের আশা জয় দিয়ে হবে নতুন করে শারজাহ্র সঙ্গে এই প্রজন্মের টাইগারদের পরিচয়।