রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন তৎপরতা বন্ধ ও নেতা হিসেবে মুহিবুল্লাহ’র উত্থান ঠেকাতে তাকে হত্যা করা হয়েছে। একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের শীর্ষ নেতার নির্দেশে হত্যা মিশনে অংশ নেন ১৯ সন্ত্রাসী। এদের মাঝে ৫ জন ছিলেন অস্ত্রধারী। পূর্ব প্রস্তুতি মতে কয়েক মিনিটেই কিলিং মিশন শেষ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ তরে সন্ত্রাসীরা। গতকাল দুপুরে মুহিবুল্লাহর হত্যার কিলিং স্কোয়াডের সদস্য আজিজুল হককে গ্রেপ্তার ও হত্যার ছক সম্পর্কে জেনে প্রেস ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক।
এর আগে শনিবার ভোরে মুহিবুল্লাহ হত্যায় কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আজিজুল হককে লাম্বাশিয়া পুলিশ ক্যাম্পের লোহার ব্রিজ এলাকা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে এপিবিএন-১৪ এর সদস্যরা।
আজিজুল হকের স্বীকারোক্তিতে সে ছাড়াও হত্যায় সহযোগিতা করা কুতুপালং ক্যাম্প-১ এর ডি ৮ ব্লকের আব্দুল মাবুদের ছেলে মোহাম্মদ রশিদ ওরফে মুরশিদ আমিন ও একই ক্যাম্পের বি ব্লকের ফজল হকের ছেলে মোহাম্মদ আনাস ও নুর ইসলামের ছেলে নুর মোহাম্মদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুলের স্বীকারোক্তির কথা জানিয়ে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক বলেন, মুহিবুল্লাহ’র হত্যার দুইদিন আগে মরকাজ পাহাড়ে কিলিং মিশনের জন্য বৈঠক করে দুর্বৃত্তরা। সেখান থেকে ১৯ জনকে মিশনে অংশ নেয়ার নির্দেশনা দিয়ে ৫ জনকে সশস্ত্র অবস্থায় পাঠানো হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে আজিজুল হক জানিয়েছে, দিন দিন মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের নেতা হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। তার উত্থান ও প্রত্যাবাসন ঠেকাতে যেকোনো মূল্যে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়।
সেই নির্দেশনা মতো ২৯শে সেপ্টেম্বর এশার নামাজের পর বাসায় চলে যাওয়া মুহিবুল্লাহকে বাসা থেকে অফিসে ডাকা হয়। প্রত্যাবাসন বিষয়ে কয়েকজন কথা বলতে ডাকছে বলে বাসা থেকে বের করে আনে গ্রেপ্তারকৃত আরসা সদস্য মুরশিদ। তারপর বাকিদের সংকেত দিয়ে সে অফিস থেকে চলে যায়।
নাইমুল হক আরও জানান, সশস্ত্র টিম অফিসে ঢুকে একজন মুহিবুল্লাহকে বলে ‘উঠ’ তোর সঙ্গে কথা আছে। বসা থেকে উঠতেই প্রথমজন একটি, তার পরেরজন দুইটিসহ চারটি গুলি করা হয় মুহিবুল্লাহকে। তারপর মুহিবুল্লাহর বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যায় স্কোয়াডের ৫ জন। পরে সবাই সতর্ক হয়ে যায়। বিভিন্নজনের ওপর দোষ চাপাতে থাকে।
হত্যায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং যেকোনো সময় তারা গ্রেপ্তার হতে পারে বলে জানান এপিবিএনের এ কর্মকর্তা।
গত ২৯শে সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পের ভেতরে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
পরের দিন (৩০শে সেপ্টেম্বর) নিহত মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় আগে
৫ জন সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ইলিয়াস নামের একজন রোহিঙ্গা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। শনিবার ৪ জন সহ এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন গ্রেপ্তার হলো।