খুলনা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী পুরাতন একটি বাজার দৌলতপুর। যুগের পর যুগ ধরে এই বাজারকে ঘিরে আশপাশের অঞ্চলের কয়েক শতাধিক পরিবারের রুটি-রুজিসহ বাজারে আসা অত্র অঞ্চলের ক্রেতা সাধারণের পণ্য সরবরাহরে একটি মাত্র স্থানীয় সনামধন্য বাজার এটি। বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য নদী ভাঙনের পাশাপাশি সম্প্রতি বাজারে উন্নত ড্রেনেড সিস্টেম না থাকা এবং পরিকল্পিত বর্জ্য নিষ্কাশণের ব্যবস্থার অভাবে বাজারে নির্গত নোংরা বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা, মাটির জীবন্ত শত্রু পলিথিনসহ মাছ-গোশতের বাজারের বর্জ্যসহ সমগ্র বাজার এলাকার পরিত্যক্ত ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন সরাসরি নদীতে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে নদী সংলগ্ন এলাকায় কলকারখানা, ঝুলন্ত টয়লেটসহ অন্যান্য স্থাপনার নিত্যদিনের বর্জ্য ও অন্যান্য পরিত্যক্ত ময়লা-আর্বজনা নদ-নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে ফেলছে। ফলে হুমকির মুখে পড়তে বসেছে আজ ভৈরব নদ।
পরিবেশবিদ সূত্রমতে, বিভিন্ন অংশের নদীর পানি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক মাত্রার দূষিত পানির প্রমাণ মিলেছে। বিশেষ করে নগরীর দৌলতপুর-খালিশপুর এলাকায় দাহ্য তৈল সরবরাহকারী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপোর ধোয়া-মোছার পর তেলযুক্ত পানি সরাসরি পড়ছে নদীতে যার ফলে ভেসে থাকা এই তেলের কারণে সূর্যের আলো নদীর পানির নিচের স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না।
ফলে মাছ ও জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। নদীতে নানা বর্জ্য ফেলে নদীকে করা হচ্ছে সংকুচিত এবং পানি হচ্ছে দূষিত আর নদীর গভীরতা পাচ্ছে হ্রাস। পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু সেই পানি আজ দূষিত হচ্ছে বিভিন্নভাবে। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বাজারের নির্গত বর্জ্য পানিতে বিগলিত হয়ে বা ভাসমান থেকে অথবা তলায় জমে থেকে জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণেই পানি দূষণ হচ্ছে। তাছাড়া নদীর তীরবর্তী শস্যক্ষেতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গিয়ে সরাসরি পড়ছে পানিতে আর পানি হচ্ছে দূষিত। যে কারণে এই দূষিত পানিতে মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী আজ হুমকির মুখে।
নদী ও পরিবেশবান্ধব সংগঠনগুলোর সূত্রমতে, ভৈরব নদীতে প্রতিনিয়ত যে বর্জ্য ফেলা হয় সেটা বন্ধ করে সংরক্ষণ, পরিশোধন করে খুলনার সুপেয় পানির অভাব পূরণ সম্ভব। সুপেয় পানির প্রয়োজনে যত্রতত্র গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আর্সেনিকের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেসিসি’র ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মোহাম্মাদ আলী জানান, নদী আমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ। আয়ের অন্যতম উৎস। তাই যে বর্জ্য বা অন্য কোনো ময়লা-আবর্জনা নদীতে না ফেলার জন্য সকলকে অনুরোধ জানান। পাশাপাশি বর্জ্য নিষ্কাশনে তার সংশিষ্ট বিভাগ যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান। এ ব্যাপারে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আব্দুল আব্দুল আজিজ বলেন, খুলনায় বর্জ্য ব্যবস্থাপণা নিষ্কাশনে নিরলস কাজ করে চলেছেন। উপরোক্ত বিষয়ে তাকে অবগত করা হলে তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরসহ কনজারভেঞ্চি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে নদী দূষণ বন্ধের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।