× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রকৃত শিক্ষার জন্য এখন প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ

এক্সক্লুসিভ


১৩ নভেম্বর ২০২১, শনিবার

শিশুদের ক্লাসরুমে ভর্তি করার ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। সে কথা দেশের অধিকাংশ অভিভাবকই হয়তো স্বীকার করবে। চার দশক আগে এক তৃতীয়াংশেরও কম শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছিল। আজ সেই সংখ্যাটা ৮০%। মহামারির আগে, ছেলেদের চেয়ে বেশি, বাংলাদেশি মেয়েরা উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল। ভারত ও পাকিস্তানে ঠিক এর উল্টোটা। শিক্ষার গুণগতমান উন্নত করার জন্য কঠিন প্রয়াস জারি রেখেছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, অর্ধেকের বেশি দশ বছর বয়সী বাংলাদেশি পড়ুয়া স্কুলে পড়ায় দক্ষ নয়, এবং ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের এক চতুর্থাংশেরও বেশি শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ নেই।
মহামারি সংক্রান্ত কারণে স্কুল বন্ধের জেরে গত দেড় বছরে বিষয়টি আরও খারাপের দিকে গেছে। গত এক দশক ধরে দেশের অর্থনীতি বার্ষিক ৬% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, মহামারির আগে তা ৮% এ পৌঁছেছে। প্রবৃদ্ধির দুটি প্রধান চালিকাশক্তি- পোশাক শিল্প এবং বিদেশি বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি। এর কারণ বাংলাদেশে শ্রমিকের অভাব নেই, অভাব দক্ষতার। তাই দেখা যায় উপসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা প্রায়শই তাদের ভারতীয় ভাইদের থেকে কম উপার্জন করে। রাজধানী ঢাকার গার্মেন্ট শ্রমিকরা চীনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় কম মজুরির জন্য পরিশ্রম করে যায়। ঢাকার পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, বৃদ্ধি নির্ভর করে সস্তার থেকে দক্ষ শ্রমিকদের কাজের ওপর। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সেই দক্ষতার জায়গায় পৌঁছাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। সরকার তা অর্জনের উপায় হিসেবে দেশের পাঠ্যক্রমকে বদলাতে চলেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। পাঠ্যপুস্তকগুলো অযৌক্তিকভাবে মুখস্থ করা বন্ধ করতে চায় সরকার। সেই সঙ্গে সিলেবাসগুলোকে পুনরায় সাজানো এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা তৈরির দিকে মনোনিবেশ করাই এখন পাঠ্যক্রমের লক্ষ্য হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব পরীক্ষা বাতিল করা হবে। সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান এবং দক্ষতার ওপর মূল্যায়ন করা হবে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, নতুন পাঠ্যক্রম নিয়োগকর্তা এবং শ্রমিকদের সঙ্গে বছরের পর বছর আলোচনার পরে তৈরি করা হয়েছে। অর্থনীতিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং দক্ষতার অভাব মেটাতে ডিজাইন করা হয়েছে নতুন সিলেবাস। কাঠের কাজ, গ্রাফিক ডিজাইন, গাড়ির মেকানিক্স, চাইল্ড কেয়ার এবং প্লাম্বিংয়ের মতো বিকল্পগুলোর মধ্যে থেকে দুটি বৃত্তিমূলক বিষয় পড়ুয়াদের বেছে নিতে হবে উচ্চ-বিদ্যালয়ের জন্য, এবং এটি বাধ্যতামূলক। সরকার আরও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা করছে। যদিও অনেক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ পরিবর্তনের পক্ষে, তবে কিছু মানুষ এত দ্রুত পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কুয়ালালামপুরের মালয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অর্থনীতিবিদ নিয়াজ আসাদুল্লাহ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যখন আমরা সাক্ষরতাই নিশ্চিত করতে পারিনি, তখন কোডিং ভালোভাবে শেখানো যায় কীভাবে?’ তিনি বলেছেন, হাজার হাজার মাদ্রাসা, যার ওপর পরিবর্তনের কোনো প্রভাব পড়েনি, কোনো সরকারি তদারকি নেই, কোরআনের বাইরে যাদের খুব বেশি শিক্ষা দেয়া হয় না তাদের ক্ষেত্রে কি হবে? শুধু পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করলেই বাংলাদেশের শিক্ষা সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না বলে মনে করেন মিঃ আসাদুল্লাহ। দেশে শিক্ষকদের বেতন কম,  প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে ৪৫ জন ছাত্রকে সামলাতে হয়। সেই সঙ্গে শিক্ষা সিস্টেম দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে বলে অভিযোগ আসাদুল্লাহর। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেতে চান না শিক্ষকরা, শহরে থাকার জন্য তারা ঘুষ দেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপের মতে, সব স্তরে নিয়োগ প্রায়ই রাজনৈতিক প্রভাব বা ঘুষের ভিত্তিতে হয়। সার্টিফিকেট-ও একইভাবে হস্তান্তর করা হয়। একজন প্রধান শিক্ষকের চাকরি নিশ্চিত করতে ঘুষ দিতে হয় প্রায় ১ মিলিয়ন (১১,৬৬০ ডলার) টাকা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় জিডিপির ২.১ %  কম  শিক্ষায় ব্যয় করে বাংলাদেশ, যেখানে ইউনেস্কোর নির্দেশ অনুযায়ী ৪-৬ % ব্যয় করার কথা বলা আছে।  মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন যে শিক্ষা ব্যয়ের একটি অংশ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসে এবং তাই এই পরিসংখ্যান হিসাবহীন। ফলস্বরূপ, গত এক দশকে প্রবর্তিত পাঠ্যক্রমের অনেক পরিবর্তন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের শিক্ষাবিদরা বলছে, যদি সত্যি নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়িত করা যায় তাহলে এটি ইতিবাচক প্রমাণিত হবে ভবিষ্যতের জন্য।  
সূত্র: ইকোনমিস্ট.কম
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর