ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৬নং গান্না ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামের হাজী আসকর আলীর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে পার্বতীপুর গ্রামের হাজী আসকর আলীর স্ত্রী সন্তানদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। ওই বাড়িতে গিয়ে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা নিশ্চিন্তে খাওয়া-দাওয়া করে একটু বিশ্রাম নিতেন। হঠাৎ একদিন মধ্য আষাঢ়ের নির্ঝর দুপুরে বাড়িটি ঘিরে ফেলে পাকিস্তানি সেনারা। বাড়িতে তখন অবস্থান করছিল বীর মুক্তিযুদ্ধের ৮নং সেক্টরের সাব কমান্ডার দুদু মিয়া সরকার, মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু তাহের, ইলাহী বকস্, সুলতান আহম্মেদসহ ১৪-১৫ জন বীর সেনানিরা। ভাগ্যের জোরে তারা বেঁচে গেলেও পাকবাহিনী ঔ বাড়িতে বসবাস করা ছেলে মেয়ে ও বৌদের ওপর চরমভাবে শারীরিক নির্যাতন করে তখনি পুড়িয়ে ছায় করে দেয় বাড়িটি। স্মৃতিময় দিনের স্মৃতিচারণ করে মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, হাজী আসকর আলী’র ৩ ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে মমতাজ উদ্দিন তখন পাকিস্তান আর্মিতে কর্মরত অবস্থায় বিদ্রোহ করে কারাগারে বন্দি ছিলেন। বাকি দুই ছেলে তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন হাজী আসকর আলী। যুদ্ধ শেষে আবার বাড়ি ফিরে সেই পোড়া বাড়িটি নতুন করে মেরামত করে নেন তিনি।
কিন্তু ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে একদল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা দেশীয় কয়েকজন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে এই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। ঐ সময় আমাদের না পেয়ে বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। পুড়ে যাওয়া কিছু টিন ছাড়া হাজী আসকর আলীর সেই বাড়িতে এখন আর কোনো স্মৃতিই নেই। আশ্চর্য্যের বিষয় বাড়ির মালিক হাজী আসকর আলী মুক্তিযোদ্ধা হলেও আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার কোনো স্বীকৃতি পাননি তিনি। এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি স্মৃতিময় ওই বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে ক্ষতিগ্রস্ত’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে সরকারিভাবে সংরক্ষণের দাবি এবং তার সন্তানদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দানের আবেদন করেছেন।