সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (এসআইইউ) আইন বিভাগে সংকট চলছে। ইউজিসির নির্দেশ না মেনে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই অবস্থায় গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধানও পদত্যাগ করেছেন। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শহরের একটি পরিচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষায় সুনামও আছে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। আর এই অস্থিরতার মূলে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৮ জন ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে তাদের ভাগ্য ঝুলে আছে। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা। তারা জানিয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ২০১৪ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি না করার নোটিশ জারি করে। কিন্তু এমন নির্দেশনা না মেনে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আইন বিভাগের ২১, ২২, ২৩ ও ২৪তম ব্যাচে ৫০ জনের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এতে চার ব্যাচের নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা শেষ করেও ৫০ জনের অধিক ভর্তি হওয়া ১৪৮ জনের আবেদন জমা নেয়নি বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য ৮ মাস আগে ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে উচ্চ আদালতে রিট করেন দুই শিক্ষার্থী। রিটের প্রেক্ষিতে গত ১৯শে সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত বিশ্ববিদ্যালয়কে ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ জরিমানার টাকা আগামী ২রা জানুয়ারির মধ্যে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তবে জরিমানার টাকা পরিশোধের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমন অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ওই ১৪৮ শিক্ষার্থী। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করেছে; বিশ্ববিদ্যালয়ের গাফিলতিতে বিভাগটির ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এ সময় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন আইন বিভাগের চারটি সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। উচ্চ আদালত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ২৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা বার কাউন্সিলে পরিশোধের জন্য নির্দেশ দিলেও কর্তৃপক্ষ জরিমানা পরিশোধ করছেন না। দ্রুত সমস্যার সমাধান না করলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেবে। এদিকে পরিস্থিতিতে এবার সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ও আইনি বিভাগের প্রধান হুমায়ুন কবীর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। গত শনিবার তিনি ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্রটি জমা দেন। পদত্যাগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিগত বছরগুলোতে একাধিকবার তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য মৌখিকভাবে কর্তৃপক্ষকে জানালেও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে অব্যাহত রেখেছেন। বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নেয়ার আগে ইউজিসি কর্তৃক প্রেরিত একটি পত্রের নির্দেশনা অমান্য করে আইন বিভাগে পঞ্চাশের অধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের প্রদত্ত বাধা নিরসনের জন্য বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমার ভূমিকা যথাযথ নয় বলে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতীয়মান হওয়ায় সার্বিক কল্যাণার্থে আমি বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে পদত্যাগ করছেন বলে পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. শহীদ উল্লাহ তালুকদার জানিয়েছেন- শিক্ষকরা নিজেরাই ১৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এই অবস্থায় জরিমানা টাকা দেয়া হবে কোথায় থেকে। দেড় বছর ধরে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যানের কোনো খবর নেই। শিক্ষার্থীদের প্রতি তার সহানুভূতি রয়েছে।