× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রাজনীতি রাজনীতিই জোর দিতে চাই বন্ধুত্বে

শেষের পাতা

কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৫ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক সঠিক পথেই আছে বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান। গতকাল বুধবার বিকালে বারিধারাস্থ নতুন চ্যান্সারি ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত এ দাবি করেন। তার মতে, বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র দুই দেশের সম্পর্কে ওঠানামা থাকতেই পারে। এটা নানা কারণে হয়ে থাকে। বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকরের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির কথা স্বীকার করে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, এখানে প্রশ্নটি আসতে পারে বলে ধারণা করছিলাম। এ জন্য আমি খোলাখুলিভাবে জবাবটা দিচ্ছি। কোনো ডিপ্লোমেসি নয়, সততার সঙ্গে কথাগুলো বলছি। সেই সময়ের ঘটনার ‘ভুল ব্যাখ্যা’ রয়েছে।
এটা আমাদের দিক থেকেই হয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক সব সময় মৃত্যুদণ্ড বিরোধী, তাই আমরা এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। বাংলাদেশ কি করবে, না করবে- এই সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই দেশের সরকার এবং নেতৃত্ব ঠিক করবে। বন্ধু হিসেবে আমরা এ নিয়ে কথা বলেছি, কোনো ইনফ্লুয়েন্স বা ক্ষতির জন্য নয়। অপর সম্পূরক প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না। আমি কারও নাম নিবো না। তবে এটুকু বলবো- আমরা কারও দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম, এ দায় আমাদের। কিন্তু এটা মানতে হবে রাজনীতি রাজনীতিই (পলিটিক্স ইজ পলিটিক্স), এটা অনেক সময় ব্যক্তি চিন্তার ঊর্ধ্বে বা আওতার বাইরে চলে যায়। তাই আমি জোর দিতে চাই সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বে। হযরত শাহজালাল ইয়ামনি (রহ.) সহ অসংখ্য সূফী-সাধকের স্মৃতিধন্য বাংলাদেশের সঙ্গে মুসলিম মডারেট রাষ্ট্র তুরস্কের বহুমাত্রিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপট টেনে রাষ্ট্রদূত তুরান দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান, এটি নষ্ট করার সাধ্য কারও নেই। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন আসে- তিক্ততার মাত্রা অর্থাৎ ২০১৬ সালে যেখানে উভয়ে পাল্টাপাল্টি রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করেছিল, সেই বাংলাদেশ ও তুরস্কের আজকের সম্পর্ক এভাবে ইউটার্ন করার নেপথ্যে কি এমন ঘটনা? রাষ্ট্রদূত দু’টি কারণ উল্লেখ করেন। বলেন, ২০১৬ সালে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার ওই কঠিন দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২৪ ঘণ্টার মধ্যে) সর্বপ্রথম চিঠি পাঠিয়েছিলেন। বিশ্বের প্রথম দেশ বাংলাদেশ যারা তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেফ তাইয়্যেপ এরদোগানের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমাদের ইউরোপীয় বন্ধুরা যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় তখন সবার আগে সংহতির বার্তা পাঠান শেখ হাসিনা। আপনারা বলতে পারেন ওই বার্তা আমাদের সম্পর্ক মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু আমি এটাকে অন্যভাবেই দেখি- তা হলো, আমাদের দুই দেশের বন্ধন কতো মজবুত এটা তারই প্রমাণ। তা না হলে বাংলাদেশ সবার আগে আমাদের পাশে দাঁড়াবে কেন? রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট চরমে ওঠে। লাখ লাখ মিয়ানমার নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়ে সীমান্ত দিয়ে এখানে আশ্রয় নেয়। সেই সংকট সরজমিন দেখতে এবং বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে আসেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি। কোনো বিলম্ব না করেই তিনি ঢাকায় আসেন। এটা আমাদের দিক থেকে একটা সাড়া ছিল। এতেও প্রমাণিত হয় আমাদের দুই দেশ কতোটা ঘনিষ্ঠ। এটাও আমাদের সম্পর্কের ভিতকে শক্তিশালী করেছে। বলতে পারেন মোড় ঘুরিয়েছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক: বহুল আলোচিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, অব্যাহতভাবে চীনের উত্থানের ফলে ইউরোপসহ গোটা বিশ্বে পাওয়ার পলিটিক্সের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চীনের প্রভাবকে সামলাতে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীর নানান কৌশল অবলম্বন করছে। ইন্দো-প্যাসিফিক এমনই একটা উদ্যোগ। তুরস্ক স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। ফলে বাংলাদেশের মতো তুরস্কও নিজের পররাষ্ট্রনীতি নিজে নির্ধারণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে আমরা কারও বরাবরই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখে চলেছি। যেমনটি করছে বাংলাদেশ। তুরস্কের অল্প একটা অংশ ইউরোপে সংযুক্ত হলেও এশিয়ার সঙ্গেই বেশি সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এশিয়ার জন্য সম্পর্ক বাড়াতে আমাদের স্বতন্ত্র ভিশন রয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের বোঝাপড়া অত্যন্ত চমৎকার দাবি করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি হয়তো এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে ওঠেনি। তবে হাই প্রোফাইল সফর বিনিময় এবং বাণিজ্য বাড়লে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তাদের বাড়তি খাতির রয়েছে কি-না? জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ না হলে তাদের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক থাকবে। তবে কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি তুরস্ক পক্ষপাতিত্ব দেখায় না।
বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোই লক্ষ্য: তুরস্ক বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি নানান পণ্যের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়াতে চায় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, দুই দেশের ভারসাম্যমূলক বাণিজ্য বিরাজ করছে। বর্তমান ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বাণিজ্য বেড়ে ১.২ বিলিয়ন ডলারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তুরস্ক বাংলাদেশ থেকে পাট বেশি আমদানি করে থাকে। ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশ অনেক উন্নয়ন করেছে। তুরস্ক এখাতে আগ্রহী। এ ছাড়া চামড়া, জাহাজ নির্মাণ সম্পর্কে যৌথভাবে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। জাহাজ শিল্পে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ-তুরস্ক দুই দেশই ধর্মপ্রাণ হলেও সকল ধর্মের সম অধিকারে বিশ্বাসী। রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান বলেন, আকর্ষণীয় সুবিধা দেয়ার কারণে তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। তিনি আরও বলেন, তুরস্ক সামরিক সরঞ্জাম নিজ দেশের জন্য উৎপাদন করে থাকে। তবে কিছু ড্রোন সিরিয়া ও লিবিয়ায় ব্যবহার হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়াতে দেশটির আগ্রহের কথা জানিয়ে রাষ্ট্রদূত তুরান বলেন, আমরা আমাদের পণ্য বিক্রিতে কোনো শর্তযুক্ত করি না। কারণ এক সময় আমাদের কাছে সামরিক পণ্য বিক্রিতে অন্যরা নানা শর্ত যুক্ত করতো। এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করেছি বলেই শর্তহীনভাবে পণ্য বিক্রি করতে চাই।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর