খেলা

নতুন ইনডোরের অপেক্ষায় ভাঙাচুরা সাগরিকা

ইশতিয়াক পারভেজ, চট্টগ্রাম থেকে

২০২১-১১-২৬

দেশের প্রথম টেস্ট ভেন্যু ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। ২০০০-এ এই মাঠেই দেশের টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেক ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে। এরপর বাংলাদেশে টেস্টে ভেন্যুর তালিকাতে যোগ হতে শুরু করে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ, জহুর আহমেদ, বগুড়া শহীদ চান্দু, ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী, মিরপুর শেরেবাংলা, খুলনায় শেখ আবু নাসের ও সব শেষ সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এরই মধ্যে অবশ্য এই টেস্ট ভেন্যুর তালিকা থেকে দুটি নাম একেবারেই ঝরে গেছে। বঙ্গবন্ধু এখন ফুটবলের দখলে আর এম এ আজিজকে পরিত্যক্তই বলা চলে। শুধু তাই নয়, ফতুল্লা, বগুড়া, খুলনাও পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এই স্টেডিয়ামগুলোতে ঘরোয়া খেলা আয়োজনও এখন দারুণ কষ্টকর। কোনো রকমে টিকে আছে চট্টগ্রামের সাগরিকা ও ঢাকার মিরপুর। তবে সবচেয়ে ব্যতিক্রম সিলেট। নানা প্রতিকূতাকে দূরে সরিয়ে এখন দেশের অন্যতম সুন্দর এই টেস্ট ভেন্যু। যা দেশের বাকি বিভাগগুলোর জন্য উদাহরণ হতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে যে মাথাব্যথা নেই তার বড় প্রমাণ সাগরিকা। এরই মধ্যে এই মাঠের গ্যালারিগুলো ধ্বংসপ্রায়। চেয়ারগুলো বসার উপযোগী নয়। ড্রেসিং রুমের বেহালদশা। ফ্লাইওভার তৈরির জন্য ইনডোর ভেঙে জাইকা নতুন তৈরির জন্য অর্থায়ন করলেও তার কাজ দুই বছরেও শেষ হয়নি। গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে তেমনি করুণ চিত্র নজরে আসে। তবে হ্যাঁ, নতুন করে এই স্টেডিয়ামকে সাজানো হচ্ছে। তাও আগামী বছর বিপিএলের আগে। এমনটাই জানিয়েছেন ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারি খান রুবেল। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘আশা করছি ফেব্রুয়ারিতে বিপিএলের আগে নতুন ইনডোরের কাজ শেষ হবে। এ ছাড়াও চেয়ারের জন্য দরপত্রের কাজ শেষ- আশা করি, সেই সময়ই নতুন চেয়ারগুলো গ্যালারিতে লাগানো হবে।’
শুরুতেই বলে রাখা ভালো টেস্ট ভেন্যুগুলোর এই বেহাল দশার জন্য শুধু যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দায়ী তা নয়। তাদের তোড়জোড় থাকলেও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) রহস্যময় ভূমিকার কারণেই স্টেডিয়ামগুলোর সংস্কার কাজে এত গাফিলতি ও ধীরগতি। সেই সঙ্গে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর উদাসীনতা যে প্রবল তা অস্বীকার করার মতো নয়। যেখানে সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা শত বাধা পেরিয়ে দেশের অন্যতম সুন্দর স্টেডিয়ামকে উপহার দিয়েছে সেখানে বাকিদের অবস্থা একেবারেই খেই হারা। নিজেদের দাবি আদায়ের ব্যর্থতার দায় তারা অনেকটাই চাপিয়ে দিতে চান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাঁধে। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের বেহাল দশার জন্য দায় এড়াতে পারেন না জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি পরিচালক আকরাম খানও। সত্যি কথা বলতে কী তিনি জানেনই না যে, তার নিজ শহরের টেস্ট ভেন্যু নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি! যেমন গতকাল তিনি বললেন, ‘আসলে ভেন্যুর বিষয়গুলো আমি দেখি না। আমার কাজ ক্রিকেট অপারেন্স নিয়ে।’ আর চট্টগ্রামের জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা যারা হর্তাকর্তা তারা যে এই বিষয়ে একেবারেই নীরব। তারাও ইনিয়েবিনিয়ে দায়টা চাপাচ্ছেন বিসিবি ও এনএসসি’র ওপরই। যেমন চট্টগ্রাম ক্রিকেটের এক উঁচু দরের সংগঠক শুরুতে মুখ খুলতে চাইলেন না। এরপর নাম না প্রকাশ করার শর্তে বললেন, ‘দেখেন স্টেডিয়ামের গোটা বিষয়গুলো দেখে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আর তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে বিসিবি। এখানে আসলে আমাদের নাগ গলানোর কিছু নেই। আমাদের দাবির এখানে কোনো মূল্যায়ন  হয় না।’ বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত খেলেছে ১২৪টি টেস্ট ম্যাচ। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন ভেন্যুতে খেলা হয়েছে ৬৫টি টেস্ট ম্যাচ। যার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০টি ম্যাচ আয়োজন করেছে জহুর আহমেদ বা সাগরিকা স্টেডিয়াম। এই  ভেন্যু থেকে সাগর খুব কাছে তাই এটি সাগরিকা বলেই পরিচিত। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় এই স্টেডিয়ামের সংস্কার ও নতুন করে কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই আসর শেষ হতেই ধীরে ধীরে আর কোনো উন্নতি হয়নি। বরংচ দিনে দিনে পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। এই ভেন্যুকে বাংলাদেশের জন্য শুভ হিসেবেই ধরা হয়। যতবারই টাইগারদের দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে ততোবারই চট্টগ্রামে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে পাকিস্তানের বিপক্ষে যখন টানা হারের কাব্য তখন এখানেই টেস্ট ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়। কিন্তু টেস্ট ভেন্যুর যে অবস্থা তাতে সফরকারী পাকিস্তানের সামনে বাজে দৃষ্টান্তই হয়ে থাকবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলেও ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন না কোনো ইনডোর সুবিধা। ২০২০-এ জাইকা নতুন ইনডোরের কাজ শুরু করলেও অদৃশ্য কারণে তার কাজ যে এখনো শেষ হয়নি। ভেন্যু ম্যানেজারও জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কবে নাগাদ শেষ হবে। তিনি বলেন, ‘জাইকা জানিয়েছে যে, এক মাস লাগতে পারে। দুটি টার্ফ চলে এসেছে, দুটি জাহাজে আছে। আর গ্লাস ও ফ্লোরের কাজও শেষ হয়ে যাবে।’ কিন্তু সরজমিন যা দেখা গেল আগামী ফেব্রুয়ারিতে তা শেষ হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ!
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status