× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জাবি ভিসি’র করোনাবিলাস /ক্যাম্পাসে থাকলেও ৬০৬ দিন অফিসে অনুপস্থিত

শেষের পাতা

ইমরান হোসাইন, জাবি থেকে
২৬ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার

করোনায় শিক্ষাখাতে অচলাবস্থা কাটিয়ে তুলতে সরকারের তাগিদ থাকলেও সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরও ঘর থেকে বের হননি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এমনকি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, জাতীয় শোক দিবস, বিজয় দিবস ও ভাষা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিবসেও তিনি ঘর থেকে বের হননি। এতে দাপ্তরিক কাজে নেমে এসেছে কচ্ছপগতি। গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো ফাইল তিন-চার কার্যদিবসের আগে তিনি স্বাক্ষর করেন না। তবে স্বাক্ষর করার জন্য যেকোনো ফাইল ভিসির কাছে পাঠাতে হয় ইস্ত্রি করে। আবার সিন্ডিকেট ও নিয়োগ বোর্ডের মতো অতি গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ সভা করেন অনলাইনে। এতে তার পুত্র কারিগরি সহায়তা দেয়ায় এসব সভায় গোপনীয়তা ভঙ্গ হয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপাচার্য কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৫ই মার্চ সশরীরে অফিস করেন উপাচার্য।
এরপর থেকে আজ অব্দি বাসায় বসেই সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। এই হিসাবে ৬০৬ দিন দপ্তরে অনুপস্থিত তিনি। যদিও বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত সশরীরে অফিস করেছেন। এদিকে,  উপাচার্যের অনুপস্থিতির ফলে তার নিজ বাসায় ফাইল চালা-চালিতে প্রশাসনিক কাজে নেমে এসেছে মন্থর গতি। উপাচার্যের অফিস সূত্রে জানা যায়, একটি ফাইল অফিসে জমা হলে সেটি প্রথমে উপাচার্যের বাড়ির গেটে যায়। করোনা সংক্রামণের আশঙ্কার কারণে এক-দুইদিন ফাইলটি সেখানে পড়ে থাকে। এরপর ইস্ত্রি করে ফাইলটি উপাচার্যের কাছে পৌঁছানো হয়। উপাচার্যের স্বাক্ষর শেষে পুনরায় ফাইলটি গেটে ফিরে আসে। সেখান থেকে কর্মকর্তারা ফাইলটি প্রশাসনিক ভবনে নিয়ে আসেন। এতে করে কখনো কখনো অতি গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে স্বাক্ষর হতে সময় লাগে তিন থেকে চার কার্য দিবস। এমনকি ফাইল যাতায়াতের এই চক্রে পড়ে অনেক ফাইল আবার হারিয়েও যায়।
আবার বাড়িতে দপ্তর বসানোয় তার পরিবারের সদস্যরা এসব কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া কারিগরি সহায়তা করায় তার পুত্র গুরুত্বপূর্ণ সভায় অনলাইনে উপস্থিত থাকেন। এতে সভার গোপনীয়তা নষ্ট হয় বলেও অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা। চলতি মাসের ৯ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সশরীরে উপস্থিত থেকে ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। রীতি অনুযায়ী প্রতি বছর উপাচার্য হল পরিদর্শন করেন ও নিজ কার্যালয়ে থেকে ভর্তি পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু দীর্ঘ ৯ দিনের ভর্তি পরীক্ষার একদিনও তিনি বাসা থেকে বের হননি।
কেন্দ্র পরিদর্শনে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘শারীরিক অসুবিধা থাকায় এবার কেন্দ্র পরিদর্শনে যেতে পারিনি। আমার প্রতিনিধিরা সবাই যাচ্ছেন, আমি দূরে থেকে কাজ করছি। অনেক ক্ষেত্রে আমিও তাদের সমান কাজ করছি, আবার বেশিও করা লাগছে। তবে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে পারলে ভালো লাগতো।’
এদিকে, গত ২২শে নভেম্বর ঢাকাস্থ নেপাল দূতাবাসের উপ-প্রধান কুমার রাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করতে আসলে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ সারেন ভিসি। কিন্তু এর আগে ২রা নভেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সঙ্গে তার নিজ বাসভবনে সাাক্ষাৎ করেন।  এছাড়া তার বাসভবনে অন্য কোনো অতিথিকে প্রবেশের অনুমতি দেননি বলে জানা গেছে।
উপাচার্যের এতদিন কার্যালয়ে অুনপস্থিত থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে উপাচার্য বর্তমানে বাসার বাইরে বের হন না।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন বলেন, ‘উপাচার্য করোনা শুরুর প্রথম থেকেই বাইরে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজেই বের হননি। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই অফিস করছেন, সেখানে একজন উপাচার্যের ঘরে বসে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করা উচিত নয়।’
ছাত্র ইউনিয়নের জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্য কোনো উপাচার্য অফিস না করে এতদিন নিজের বাসায় বসে আছেন বলে আমার জানা নেই। তবে উনি (জাবি উপাচার্য) শয্যাশায়ী কি-না, সে ব্যাপারে জানি না।’
এ বিষয়ে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর