ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লার গাড়ি চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত গাড়ির মূল চালক হারুন মিয়া ওরফে কাইল্লা হারুনকে (৩৭) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পল্টন থানায় হস্তান্তর করেছে। এদিকে নাঈম নিহত হওয়ার ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম চলছে। সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, নাঈমকে চাপা দেয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই হারুন পালিয়ে যান। তবে মূল অভিযুক্ত হারুনের সহযোগী রাসেল খান পালাতে পারেননি। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে তিনদিনের পুলিশ রিমান্ডে রয়েছে। রাসেল দৈনিক মজুরির বিনিময়ে হারুনের সহযোগী হিসেবে কাজ করতো।
তিনি করপোরেশনের স্থায়ী বা অস্থায়ী কর্মী নন।
র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক জানিয়েছেন, যে গাড়িটি নটর ডেমের শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়েছে সেটি সিটি করপোরেশন থেকে হারুনের নামে বরাদ্দ ছিল। হারুন ২০২০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে গাড়িটি চালিয়ে আসছেন। তবে ঘটনার দিন তিনি গাড়ি চালাননি। তার অনুপস্থিতে দৈনিক মজুরির বিনিময়ে রাসেল গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। তারা দু’জনেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই।
২৪শে নভেম্বর বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান (১৭) মারা যান। গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই নাঈম হত্যার বিচার, অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করাসহ নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত দুইদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বরের সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে নানান স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় মতিঝিল এলাকা। এরপর তারা নগর ভবনের দিকে চলে যান। পরে সেখানে দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে তিনি শিক্ষার্থী নাঈমের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির শাস্তি নিশ্চিত করার কথা জানান। ডিএসসিসি’র নিজস্ব অর্থায়নেই গুলিস্তান মোড়ে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন মেয়র। মেয়রের আশ্বাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নগর ভবনের মূল ফটক ছেড়ে চলে যান। তবে তারা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। আর বিচার না হলে ফের সড়কে নামার হুঁশিয়ারি দেন।
শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি: শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির মধ্যে আছে- জেলা শহরের বিভিন্ন রুটে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করা, স্কুল-কলেজের সামনে হর্ন ও ওভারস্পিডিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে জরিমানা ও প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের অধিকার দেয়া। সব শিক্ষার্থীর হাফ পাস নিশ্চিত করা। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একাধিক স্পিড ব্রেকার নির্মাণ। শহরের প্রতিটি অচল ট্রাফিক লাইটের সংস্কার এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। ট্রাফিক আইনের সঠিক প্রয়োগ। জেব্রা ক্রসিংয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিত করা। চলন্ত বাসে যাত্রী ওঠানামা করালে প্রত্যেক বাসকে আইনের আওতায় আনা। সর্বোপরি নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করা।