সীমান্তের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তি এবং উদ্ভূত যে পরিস্থিতি শান্তি ও ধৈর্যের সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক আলোচনা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া জোরদারে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। একই সঙ্গে নিজ নিজ সীমান্ত এলাকায় প্রস্তাবিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। কলকাতায় সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর মধ্যকার আঞ্চলিক সম্মেলনে ওই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএনআই। তবে সম্মেলনে সীমান্তহত্যা বন্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কী আলোচনা হয়েছে, বা বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্ডারে প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র ব্যবহারে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের যে অঙ্গীকার রয়েছে তার বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না? সে সম্পর্কে ওই সংবাদ মাধ্যম তাৎক্ষণিক কিছু জানাতে পারেনি। ঢাকায় বিজিবি সদরের তরফেও এ নিয়ে কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রচার করা হয়নি। দিল্লি ও কলকাতা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, বিজিবি-বিএসএফ’র মধ্যে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক চারদিনের সম্মেলনটি শুক্রবার কলকাতায় শেষ হয়েছে। আঞ্চলিক ওই সম্মেলনে সীমান্ত এলাকায় থাকা নিজ নিজ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, বোঝাপড়া তথা কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং উভয়ের অভিন্ন স্বার্থে সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুর (অমীমাংসিত এবং চলমান) নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ওই সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল।
২৩-২৬শে নভেম্বরের ওই সম্মেলনে বিজিবি’র উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রংপুর এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় যশোর অঞ্চল যৌথভাবে অংশ নেয়। সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন যশোর রিজিওনের কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওমর সাদি। রংপুর অঞ্চলের অধিনায়ক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এবিএম নওরোজসহ স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিজিবি’র আরও ৬ প্রতিনিধি ওই সম্মেলনে অংশ নেন। এতে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন বিএএসএফ’র সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মহাপরিদর্শক অনুরাগ জর্জ। নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি রাভি গান্ধী, গৌহাটি ফ্রন্টিয়ারের আইজি সঞ্জয় সিংসহ বিএসএফ’র ৫ এবং ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা প্রতিনিধিদলে ছিলেন। বিএসএফ’র বরাতে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, আঞ্চলিক ওই সম্মেলনে কার্যকর সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য অপরিহার্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। যার মধ্যে রয়েছে চোরাচালান বিরোধী অভিযান, যুগপৎ বা সমন্বিত টহল, যৌথ টহল, সীমান্তে থাকা কাঁটাতারের বেড়ার সুরক্ষা, আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন প্রতিরোধ এবং অবৈধ আন্তঃসীমান্ত চলাচল রোধ নিশ্চিত করা। বৈঠকে সীমান্ত এলাকার অবকাঠামো ও উন্নয়নমূলক কাজ সংক্রান্ত অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সংস্থাটি বলছে, এতে উভয় পক্ষই কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান এর অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করে। যার মধ্যে রয়েছে যুগপৎ সমন্বিত টহল, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং সকল স্তরে মিটিং বাড়ানো। বিএসএফ বলেছে, উভয়পক্ষই অবাধ তথ্যবিনিময় এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। সীমান্তের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ এবং মাদক চোরাচালানের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি কার্যকর বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিশ্চিত করার বিষয়ে উভয়ে সম্মত হয়েছে। এএনআই বলছে, সম্মেলনে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ হ্রাসের কারণে একে-অন্যের প্রচেষ্টার প্রশংসা যেমন করেছেন তেমনি উভয় পক্ষ দায়িত্ব পালনকালে উদ্ভূত পরিস্থিতি ধৈর্য্য এবং শান্তির সঙ্গে মোকাবিলায় পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। কলকাতার সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকার অভ্যন্তরীণ ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনায় বিএসএফ হস্তক্ষেপ করতে পারবে মর্মে সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা জারি করেছে তা নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে। বিজেপি বিরোধী দলগুলো এরইমধ্যে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করেছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাব এ নিয়ে রীতিমতো প্রতিবাদ মুখর। বিএসএফ’র ক্ষমতা বা এখতিয়ার বাড়ানো নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে সেই সময়েই কলকাতার বিএসএফ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে বসে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স। প্রতিবছরই নিয়ম করে দু’বার আঞ্চলিক পর্যায়ের ওই সম্মেলন হয়ে থাকে। সে অর্থে এটা রুটিন বৈঠক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। ফলে দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত বাহিনীর ওই সম্মেলনে নতুনত্ব না থাকলে বিএসএফকে নিয়ে তৈরি হওয়া সামপ্রতিক বিতর্কের আবহে বৈঠকটির বিশেষ তাৎপর্য কি তা খুঁজছে কলকাতার সংবাদ মাধ্যমগুলো।