× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজুড়ে নতুন ওমিক্রন আতঙ্ক, আবার নিষেধাজ্ঞা, বিধিনিষেধ

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(২ বছর আগে) নভেম্বর ২৭, ২০২১, শনিবার, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

বিশ্বজুড়ে নতুন আতঙ্ক। করোনা মহামারি কমে আসায় মানুষ যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে, ঠিক তখনই সামনে এসে হাজির করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। প্রাথমিকভাবে একে সবচেয়ে ভয়াবহ ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে একে শনাক্ত করা হয়েছে বি.১.১.৫২৯ নামে। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টের নামকরণ করেছে ওমিক্রন। তারা একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে শ্রেণিবিভাগ করেছে। বলা হচ্ছে প্রচলিত যেসব টিকা বের হয়েছে, এই ভ্যারিয়েন্ট তাকে পাত্তাই দেয় না ।

অর্থাৎ এর জন্য কোনো টিকা কাজ করে না। তবে এ নিয়ে নতুন করে গবেষণা চলছে।
এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা হয়নি এর ক্ষতিকর প্রভাব কেমন। ফলে দেশে দেশে নতুন আতঙ্ক, উদ্বেগ। এরই মধ্যে অনেক দেশের সঙ্গে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশ। নতুন বিধিনিষেধ দিয়েছে ইরান, ভারতসহ অনেক দেশ। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অমান্য করে এসব বিধিনিষেধ দেয়া হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এই ভ্যারিয়েন্টের রয়েছে বিপুল পরিমাণ রূপান্তর। প্রাথমিক যে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে এই ভ্যারিয়েন্ট নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ২৪ শে নভেম্বর প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর বোতসোয়ানা, বেলজিয়াম, হংকং এবং ইসরাইলে শনাক্ত হয়। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন। এ জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বোতসোয়ানা, লেসোথো, ইশাতিনি থেকে, যদি কেউ বৃটিশ বা আইরিশ নাগরিক না হন অথবা বৃটেনের রেসিডেন্ট না হন, তাহলে যেকোনো ব্যক্তিকে বৃটেনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা, বোতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, ইশাতিনি, মোজাম্বিক এবং মালাবি’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। এর আগে এমন বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছিল। এই বিধিনিষেধ সোমবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ থেকে ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলো ও সুইজারল্যান্ড।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি ভাইরাসের পরিবর্তন, রূপান্তর কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ওই ভাইরাসকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে তখনই আখ্যায়িত করা হয় যখন সে সংক্রমণকে প্রভাবিত করতে পারে, টিকার কার্যকারিতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারে। শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এই রকম একটি ভ্যারিয়েন্ট, যাকে প্রথমে বি.১.১.৫২৯ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত গতিতে। জাতিসংঘের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক এই সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, এই ভ্যারিয়েন্টের অসংখ্য রূপান্তর আছে। তার মধ্যে বেশ কিছু আছে ‘কনসার্নিং’। তারা আরো জানায় এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ প্রথম গত ৯ই নভেম্বর সংগ্রহীত একটি নতুনাতে পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এই ভ্যারিয়েন্টের ক্ষতিকর দিক বুঝতে তাদের কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এটা কি পরিমাণে সংক্রমণযোগ্য বা কি পরিমাণে সংক্রমিত করতে পারে তা নির্ণয়ের কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অন্যদিকে বৃটেনের স্বাস্থ্য বিষয়ক শীর্ষ এক কর্মকর্তা প্রফেসর জেমস নাস্মিথ সতর্কতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অবশ্যই কম কার্যকর হবে টিকা। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের এই ‘স্ট্রাকচারাল বায়োলজিস্ট’ বলেন, এটা খারাপ খবর। তাই বলে এটা ধ্বংসযজ্ঞ নয়। তিনি বলেন, এই ভ্যারিয়েন্টের যে রূপান্তর তাতে এটাই বলা হয়েছে যে, সে অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে। এটা নির্ধারণ করা হয়েছে, কিভাবে সবটা রূপান্তর একসঙ্গে কাজ করে।

সায়েন্টিফিক প্যান্ডেমিক ইনফ্লুয়েঞ্জা মডেলিং গ্রুপের (স্পি-এম) সদস্য ড. মাইক টিলডেসলি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার শতকরা মাত্র ২৪ ভাগ মানুষকে পূর্ণাঙ্গ টিকা দেয়া হয়েছে। এর কারণে সেখানে অতি দ্রুত গতিতে এই ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে এরই মধ্যে অনেক দেশ লাল পতাকা উড়িয়েছে। তবে টিকা এখনও মারাত্মক অসুস্থতা প্রতিরোধ করতে পারে। তিনি বলেন, যথাযথভাবে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত আমরা ঠিক বলতে পারবো না এই ভ্যারিয়েন্ট শরীরের এন্টিবডিকে আক্রান্ত করতে পারে কিনা। এন্টিবডি আপনাকে আমাকে ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত রাখে।

এ অবস্থায় অনেক দেশে তড়িঘড়ি করে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলেছে, এসব দেশের উচিত ঝুঁকি ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপর দিকে দৃষ্টি দেয়া। উল্লেখ্য বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ আরো কিছু দেশে বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার থেকে নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে জাপান। তাতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সেখানে যাওয়া ভ্রমণকারীদেরকে ১০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ সময়ে মোট ৪ বার পরীক্ষা করাতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা, বোতসোয়ানা এবং হংকং থেকে যাওয়া ব্যক্তিদের আরো স্ক্রিনিং এবং পরীক্ষা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ সেখানকার ৬টি দেশের ভ্রমণকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেবে ইরান। রাষ্ট্রীয় টিভিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার ওইসব দেশ থেকে কোনো ইরানি দেশে ফিরতে হলে তাদেরকে দু’বার পরীক্ষায় নেগেটিভ হতে হবে।

এসব পদক্ষেপের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো পাহলা বলেছেন, ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা দেয়াটা অন্যায়। তিনি আরো বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্টের খবরে কিছু দেশ যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদর্শ ও মানদ-ের পুরোপুরি বিপরীত। তার কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে সাউথ আফ্রিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের চেয়ারপারসন অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজির কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, তার দেশের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অপরিপক্ব। তিনি বলেছেন, ঠিক এই মুহূর্তে বিষয়টি চায়ের কাপে ঝড় ওঠার মতো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর