× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দৃশ্যপটে বহুমুখী অস্থিরতা!

মত-মতান্তর

ড. মাহফুজ পারভেজ
২৭ নভেম্বর ২০২১, শনিবার
ড. মাহফুজ পারভেজ

শীতকালে বাংলাদেশের রাজনীতি গরম হওয়ার পুরনো অতীত যেন আবার ফিরে এসেছে। সামাজিক, রাজনৈতিক পরিসরে চলছে ক্ষোভ। স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়ও সামনে চলে এসেছে। অর্থনৈতিক তথা দ্রব্যমূল্যের চাপ তো আছেই। ফলে দৃশ্যপটে এখন বহুমুখী অস্থিরতা বিরাজমান।
 
অস্থিরতার ফিরিস্তি বেশ লম্বা। একটি থামতে না থামতেই আরেকটি এসে হাজির হচ্ছে। উত্তেজক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সামাল দিতে না দিতেই উপস্থিত জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ইস্যু। তৈরি হলো এক ধরনের অস্থিরতা ও উদ্বেগ।
অস্থিরতায় পাগলা হাওয়া লাগল তেল নির্ভর সকল শিল্প, কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা, গণপরিবহণ থেকে শুরু করে মানুষের ঘরের নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে।
 
টালমাটাল বাজার ব্যবস্থায় লবেজান মানুষকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব। এরই মধ্যে সড়কে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর পটভূমিতে  তৈরি হয়েছে আরো অসন্তোষ ও অস্থিরতা। সামনে চলে এসেছে নিরাপদ সড়কের চলমান ও বিক্ষুব্ধ দাবি।
 
আন্দোলনের এহেন অস্থির পরিস্থিতিতে যুক্ত হয়েছে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি। বিএনপি এবং তার সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সর্বশক্তিতে এই ইস্যুতে রাজপথে সরব। বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি এই ইস্যুতে মুখর।
 
তাৎপর্যপূর্ণভাবে যেদিন (১৪ নভেম্বর) বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে 'সিসিইউ'তে নেওয়া হয়, সেদিনই নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আইসিইউ'তে নির্বাচন, 'লাইফ সাপোর্টে' গণতন্ত্র। আপাত সম্পর্কহীন ও কাকতালীয় হলেও এসব কথা ভালো পরিস্থিতির বদলে সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগজনক বার্তা বহন করে।
 
এইসব সমস্যা রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিসরেই সীমাবদ্ধ নেই বা অস্থিরতার এখানেই শেষ নয়। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাতেও নতুন করে বিপদ দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু আর করোনার চাপা আক্রোশ তো ছিলই, তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন ধরনের সংক্রমণের ভয়ঙ্কর ভীতি। পুরো পৃথিবী আবার সতর্ক করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্টের নবতর আক্রমণের আশঙ্কায়।
 
বাস্তবতা এটাই যে, আধুনিক সমাজসমূহ বহুবিধ সমস্যা ও নানামুখী অস্থিরতার বাইরে থাকতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও এমন কোনো দেশ পাওয়া যাবে না, যাদের কম-বেশি সমস্যা বা অস্থিরতা নেই। কিন্তু সেসব দেশে অস্থিরতা বিস্ফোরিত হয়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। কারণ, সুশাসনের ধারায় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে পরিচালিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে আগেভাগেই সমস্যার সমাধান করে অস্থিরতা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়। এমন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার নিজস্ব দক্ষতার ফলে উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্র মজবুত, রাজনৈতিক ব্যবস্থা চাপমুক্ত এবং সমাজ স্থিতিশীল হতে পেরেছে।
 
মুস্কিল হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তেমনটি দেখা যায় না। ফলে সেসব দেশে সমস্যার সমাধান হয় শ্লথ। রাজনৈতিক, আমলাতান্ত্রিক শৈথিল্যের জন্য সমস্যার বীজ চাপা থাকতে থাকতে মহীরুহে পরিণত হয় এবং সৃষ্টি করে বহুমুখী অস্থিরতা। ফলে সমস্যার সমাধানে প্রথমত ও প্রধানত প্রয়োজন সদিচ্ছা ও পদক্ষেপ। শুধু পদক্ষেপহীন সদিচ্ছা থাকলে যেমন ফল লাভ সম্ভব নয়, তেমনি স্বদিচ্ছাহীন পদক্ষেপেও সমস্যার সুরাহা হওয়া অসম্ভব।
 
বাংলাদেশের আর্থ, সামাজিক, রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বহুমুখী অস্থিরতা বিস্তারের পেছনে কোন্ কারণকে চিহ্নিত করা যায়? সদিচ্ছার অভাব? পদক্ষেপের অভাব? নাকি অন্যকিছু? এককথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে, পক্ষ-বিপক্ষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একেবারেই সদিচ্ছা নেই, তা বলা যাবে না। কিংবা সমস্যার সমাধানে ও অস্থিরতা প্রশমনে কোনো পদক্ষেপই গৃহীত হচ্ছে না, এমন বলাও ঠিক হবে না। তাহলে ত্রুটি কোথায়? কেন চারপাশের বিরাজমান সমস্যার আশু সমাধান হচ্ছে না? ক্রমে ক্রমে সঙ্কট ঘণীভূত হয়ে চারপাশে অস্থিরতার বিস্তার ঘটাচ্ছে?
 
বিরাজমান বহুমুখী অস্থিরতার পেছনে অন্তর্নিহিত কারণ ধরে প্রতিকার করতে না পারলে চারপাশে উদ্ভূত বহুমুখী অস্থিরতার অবসান হবে না।
 
 
 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর