× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

১০০০ ইউপি নির্বাচন আজ / বিনা ভোটে জয়ী ৫৬৯ জন

প্রথম পাতা

নূরে আলম জিকু
২৮ নভেম্বর ২০২১, রবিবার

তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। সারা দেশের এক হাজার ইউনিয়ন ও ৯টি পৌরসভায় আজ ভোটগ্রহণ করা হবে। এ ধাপের নির্বাচনে আগে ব্যাপক সংঘাত ও প্রাণহানি হওয়ায় সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচন। আগের ধাপগুলোতে সহিংসতা ও প্রাণহানি হওয়ায় এবার নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হয়েছে। প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে ব্যাপক। তৃতীয় ধাপের এ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোট ৫৬৯ প্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ১০০ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৩২ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা ভোটে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে তৃতীয় ধাপেও এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম অঞ্চল।
এ অঞ্চলের ৭৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২৯টিতেই চেয়ারম্যানরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এরপরের অবস্থানে থাকা কুমিল্লা অঞ্চলের ১১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২২টির চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ঢাকা অঞ্চলের ৭৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৬টিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত ১০ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১ম ও ২য় ধাপের নির্বাচনী সহিংস ঘটনা ঘটেছে ৫ শতাধিক। আহত হয়েছেন প্রায় ৮ হাজারের বেশি মানুষ। তবে নির্বাচন কমিশন ও গণমাধ্যমের তথ্য মতে, চলতি ইউপি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, চলমান নির্বাচনী সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা ১০০-এর কাছাকাছি। এরমধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। সর্বশেষ গত শুক্রবার ভোলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আরও একজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।  
তৃতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। প্রচারণা নিয়েও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। সহিংসতার পাশাপাশি প্রাণহানিও ঘটেছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান সহিংসতায় নির্বাচন কমিশন বিব্রত। সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে ইসির নির্দেশনা দেয়া থাকলেও তা কতটুকু কার্যকর হবে অনেকটা নির্ভর করবে আজ অনুষ্ঠিত হওয়া ভোটের ওপর।
এদিকে যশোরের শার্শায় ৩য় ধাপের নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বিরোধীদের আক্রমণে আহত চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী ফকির (৫২) মারা গেছেন। এ ঘটনায় নিহতের ১২ জন সমর্থক আহত হন। চতুর্থধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানিবহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ মিয়াকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গত ২১শে নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদরের চরকেওয়ার ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় ১জন মারা গেছেন। ওইদিন রাত ৮টার দিকে এই ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আব্দুল হকের বাড়িতে আকস্মিক হামলা হয়। বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক মামুন তার লোকজন নিয়ে বাড়িতে ককটেল ফাটায়। ককটেলের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক আব্দুল হক স্ট্রোক করেন। পরে তার মৃত্যু হয়। এ সময় আশেপাশের ৪০টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। নেত্রকোনার তিন উপজেলার ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে বাড়ছে সংঘাত সংঘর্ষ। চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হতে বেশিরভাগ ইউনিয়নেই অনেকটা মারমুখী অবস্থানে প্রার্থীরা। গত ২০শে নভেম্বর কলমাকান্দার রংছাতি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ভাদুর ইউনিয়ন ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচির রাজাপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর বটতলা বাজারে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে দু’জন গুলিবিদ্ধসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় মোস্তাক ধাবক নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে।  তৃতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নওগাঁর মান্দায় সংঘর্ষে রানা (৩৮) নামে একজন মারা গেছেন। ১৮ই নভেম্বর ভোরে তার মৃত্যু হয়। রানা গণেশপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিনের ছেলে। তিনি আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরীর সমর্থক ছিলেন। এর আগে গত ১১ই নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের দিন ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে হামলা-সংঘর্ষে প্রাণ হারান অন্তত সাতজন। আহত হন প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থক, পুলিশ, সাংবাদিকসহ কয়েকশ’ ব্যক্তি। স্থানীয় এ নির্বাচনকে ঘিরে আগে থেকেই সংঘাতের আশঙ্কা করা হলে এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনও কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছিল। তাতেও  ঠেকানো যায়নি সংঘাত প্রাণহানি। তার রেশ ধরে পরদিন ২ জন নিহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে  লিপি আক্তার (৩২) নামের একজন বুকে গুলিবিদ্ধসহ ৮ জন আহত হয়েছেন। পটুয়াখালীতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর হামলার শিকার হয়েছেন নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী মোহাম্মদ রুবেল মোল্লা ও তার অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা। রংপুরের পীরগাছা সদর ইউনিয়নের অনন্তরাম জানেরপাড় এলাকায় পরাজিত মেম্বারপ্রার্থীর বাড়িতে অপর পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে ২ নারীসহ ৪ জন আহত হয়েছেন।  গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। শতাধিক বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর আনারস প্রতীকের সমর্থকরা নৌকা প্রার্থীর এক কর্মীর বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শেরপুরের সদর উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপে চূড়ান্তভাবে এখন মাঠে রয়েছেন ৫০ হাজার ১৪৬ প্রার্থী। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে চার হাজার ৪০৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৪ হাজার ৬৩২ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১১ হাজার ১০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর আগে, দুই ধাপে এক হাজার ১৯৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ১৫২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিনা ভোটে জয়ী সদস্যদের যুক্ত করলে এ সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫২ জন। আর শুধু তৃতীয় ধাপের এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ৫৬৯ জন। আগের দুই ধাপের মধ্যে গত ২১শে জুন অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের ২০৪ ইউপিতে ২৮ জন চেয়ারম্যান ও গত ২০শে সেপ্টেম্বর একই ধাপের ১৬০টিতে ৪৪ জন চেয়ারম্যান, ৩৯ জন সদস্য ও ৭ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপের ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ৮০ জন চেয়ারম্যান, ২০৩ জন সাধারণ সদস্য ও ৭৩ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা ভোটে জয় পান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর