× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হাফ ভাড়ায় নারাজ মালিকরা / আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ নভেম্বর ২০২১, রবিবার

নিরাপদ সড়ক ও হাফ পাসের দাবিতে আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই দাবি মানতে নারাজ পরিবহন নেতারা। এনিয়ে বিআরটিএ ও পরিবহন মালিক সমিতির দ্বিতীয় দিনের বৈঠকেও কোনো সুরাহা হয়নি। উল্টো পরিবহন মালিকদের ‘গরিব’ দাবি করে চাওয়া হয়েছে ভর্তুকি। শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।

হাফ পাসের দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মাঝে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুতে নতুন মোড় নেয় আন্দোলন। নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি জোরালো দাবি জানানো অর্ধেক ভাড়া কার্যকরের।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়কের দাবিতে হয় বৃহৎ আন্দোলন। সেই আন্দোলনে বেঁধে দেয়া ৯ দাবিই জানানো হচ্ছে নতুন করে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শনিবার ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে রাপা প্লাজার সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, ৯ দফা দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার তারা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে ওই দিন দুপুরে শিক্ষার্থীরা বিআরটিএ কার্যালয় ঘেরাও করবে। আর একই দাবিতে আজ ও আগামীকাল সোমবারও বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ মিরপুর সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অংশ নেন বিভিন্ন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। তারা মানববন্ধনের পরে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের পোশাকেই যান চলাচল রোধ করেন। তারা সড়ক ছাড়েন বেলা দু’টার দিকে। এ সময়ে তারা এম্বুলেন্স যাতায়াতে কোনো বাধা সৃষ্টি করেননি। এছাড়াও সড়কে চলমান বিভিন্ন পরিবহনের চালকদের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেন। কাগজপত্র যাদের ঠিক আছে তাদের ধানমন্ডির বিকল্প সড়কে যেতে দেন।  

শিক্ষার্থীরা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, নিরাপদ সড়ক চাই, জাগো জনতা জেগে ওঠো’, ‘অধিকার আদায়ে আমরা তৎপর’, ‘মৃত্যু কুয়া আজ সড়ক হলো’, ‘আর কতো মায়ের কোল খালি হলে টনক নড়বে?’, ‘রক্ত কেন ঝরছে, সরকার কি মরছে?’ ‘রাস্তা বন্ধ রাষ্ট্র নির্মাণের কাজ চলছে’, ‘পানি নাই, বিস্কুট নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এছাড়াও তারা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

লালমাটিয়া মহিলা কলেজ, মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ, নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ, মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ, রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ, মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ, তেজগাঁও কলেজসহ নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই ৯ দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করেন।

শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিগুলো হলো- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই বিধান সংবিধানে সংযোজন করতে হবে, নৌপরিবহন মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না, শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভারব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, প্রত্যেক সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের নিতে হবে এবং শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

শনিবার শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামার খবরে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আমাদের দাবিদাওয়ার সঙ্গে একমত। কিন্তু এভাবে আন্দোলন না করতে অনুরোধ করেন তিনি।

বেসরকারি বাসে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী হাফ ভাড়া নির্ধারণ করতে গতকাল দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়।

রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে এই বৈঠকে ঢাকার বাসমালিকদের ‘গরিব’ উল্লেখ করে উল্টা ভর্তুতি দাবি করেন। আর এসব বিষয়ে ফয়সালা করতে সময় লাগবে জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছে বিআরটিএ।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকায় নগর পরিবহনের যে বাসগুলো চলে, তার মালিকদের ৮০ শতাংশই গরিব। একটা বা দু’টো বাস চালিয়ে তাদের সংসার চলে। তাই বাসমালিকদের ক্ষতিপূরণ বা ভর্তুকির বিষয়টি নির্ধারণ করেই হাফ ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোন তহবিল থেকে এই অর্থ আসবে সেটিও নির্ধারণ করতে হবে।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অনেকগুলো প্রস্তাব দিয়েছেন। ঢাকা শহরে কতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কতো শিক্ষার্থী, ইত্যাদি তথ্য তারা চেয়েছেন। হাফ ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের আলাদা কোনো পরিচয়পত্র দেয়া হবে কিনা, সে বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। পুরো বিষয়টি সুরাহা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এখন তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন আছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর