পাঁচ মাস পর ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে ভিয়েনায়। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তিতে ফেরার বিষয় নিয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হয় এই চুক্তি। এর অধীনে পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নতুন করে অবরোধ আরোপ করেন ইরানের বিরুদ্ধে। তারপর থেকেই পারমাণবিক কর্মসূচিতে অনেক এগিয়ে গেছে ইরান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
অনেকে বলছেন, ইরান এরই মধ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। তা দিয়ে তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি।
কিন্তু ইরান এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে বরাবরের মতোই। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কথা দিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই। তিনি বলেছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত ২০১৫ সালের চুক্তিতে ফিরে যাবেন। তাই নির্বাচিত হয়ে সেই তোড়জোড় শুরু করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে ফিরে এলে অবরোধ প্রত্যাহারের কথা বলেছেন জো বাইডেন। পক্ষান্তরে ইরান প্রত্যাশা করছে আগে যুক্তরাষ্ট্র তার কথা রাখবে।
ওদিকে পশ্চিমা কূটনীতিকরা সতর্ক করে বলছেন, সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমাধানে পৌঁছার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এরই মধ্যে ইরান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। তা দিয়ে তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি। এ নিয়ে এপ্রিলে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আলোচনা শুরু হয়েছে চুক্তিতে যুক্ত পাঁচটি দেশের সঙ্গে। তারা হলো চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও বৃটেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন পরোক্ষভাবে।
ওদিকে ইরানের উদারপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির স্থানে এসেছেন পশ্চিমাদের কঠোর সমালোচক ও কট্টরপন্থি ইব্রাহিম রইসি। ২০১৫ সালের চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সমঝোতায় অংশ নিয়েছিলেন হাসান রুহানি। আগস্টে ক্ষমতায় আসেন ইব্রাহিম রইসি। এর আগে তিনি কথা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি এই আলোচনাকে টেনে নিতে দেবেন না। এ মাসের আগে পর্যন্ত তিনি ভিয়েনায় আলোচনায় ফিরতে রাজিও ছিলেন না। তিনি বলেছেন, নিজেদের স্বার্থের পক্ষে থাকবে ইরান। সেখান থেকে কোনো অবস্থাতেই পিছপা হবেন না ইরানের সমঝোতাকারীরা।
ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বেশ কিছু দাবি করেছে। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার অপরাধের কথা স্বীকার করতে হবে, অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সব অবরোধ তুলে নিতে হবে। একই সঙ্গে এমন নিশ্চয়তা দিতে হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত কোনো প্রেসিডেন্টই আবার একতরফাভাবে এই চুক্তি বাতিল করতে না পারেন।
ইরান বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত রবার্ট মালি বলেছেন, প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন যে অবরোধ দিয়েছিল এবং তাতে ইরানের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, সেই অবরোধ প্রত্যাহারসহ অনেক বিষয় রয়েছে। রবার্ট মালি ইরানকে সতর্ক করে বলেছেন, সমঝোতার জানালা চিরদিনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে না। এটি একটি কালানুক্রমিক ঘড়ি বা সময় নয়। এটা হলো টেকনোলজিক্যাল ঘড়ি বা সময়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, ইরান যদি সুস্থ বিশ্বাসে সমঝোতায় না আসে তবে, সব রকম বিকল্পই হাতে আছে।