× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলাদেশ বিনিয়োগের উত্তম স্থান

প্রথম পাতা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৩০ নভেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার

দু’দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের সমাপনী দিনে বক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের উত্তম স্থান। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য নতুন বাংলাদেশকে বিশ্ব জেনেছে। এখান থেকে বিনিয়োগকারীরা শতভাগ মুনাফা তুলতে পারবেন।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের শেষদিনে বেশ কয়েকটি সেশন এবং সমাপনী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল। এ ছাড়া বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সৌদি আরবের যোগাযোগমন্ত্রী সালেহ নাসের আল জাসের, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।  
অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল বলেন, গত ১২ বছরে বাংলাদেশ ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
আলোচ্য সময়ে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কয়েকগুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার একশ’র বেশি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করেছে। এসব জোন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এখানে বিনিয়োগ করে শতভাগ মুনাফা তুলে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা বাংলাদেশে নিঃসংকোচে বিনিয়োগ করুন। আমি নিশ্চিত আপনারা হতাশ হবেন না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবার জন্য আদর্শ স্থান বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, এবারের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্ব নতুন বাংলাদেশকে জেনেছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে। দেশি বিনিয়োগও বাড়ছে। একইসঙ্গে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বন্দরসহ বড় বড় বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। অবকাঠামোগত এসব উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। সৌদি আরবের যোগাযোগমন্ত্রী সালেহ নাসের আল জাসের বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছেন। সবশেষে যারা এই বিনিয়োগ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান উপদেষ্টা।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বেশ কয়েকটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ‘ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড লজিস্টিকসঃ দ্য রাইট মুভ’ বিষয়ক পর্বে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার নানা দিক তুলে ধরেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম শাহজাহান। তিনি বলেন, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, বে টার্মিনালসহ বিনিয়োগের সকল অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী বছরের মধ্যে বড় বড় অনেক প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হবে। সময়ের মধ্যে সেগুলো প্রস্তুত হবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপিএ) মহাপরিচালক আবুল বাশার বলেন, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব খাতেই উন্নয়ন হয়েছে। এখন দরকার নতুন প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তি।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেমের) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, বিমানবন্দরের প্রতি জোর নজর দিতে হবে। কারণ পণ্য পরিবহনে বিমানবন্দরে কিছু জটিলতা আছে। তবে দেশের রেল খাতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু সেবা আরও দ্রুত ও সহজ করতে আইসিটি খাতে আরও উন্নয়ন দরকার।
বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি নকীব খান বলেন, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক সক্ষম। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন এ দেশকে বিনিয়োগের সর্বোত্তম স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিল্ডের সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়গুলোকে ফোকাল পয়েন্টে নিয়ে আসতে হবে। সৌদি আরবে লজিস্ট্রিক ও ট্রান্সপোর্ট মিনিস্ট্রি আছে। এদেশেও এই ধরনের মন্ত্রণালয় গঠন নিয়ে চিন্তা করতে হবে। সব সেবা এক দরজায় পাওয়া যায় এমন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা দরকার। মধ্যম আয়ের দেশের জন্য যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন, সেভাবে এখনো  পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে উঠেনি দেশ।
পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জিঃ চার্জ এহেড শীর্ষক পর্বে বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রী নসরুল হামিদ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সৌদি আরবের অ্যাকোয়া পাওয়ারের গ্যাস টু পাওয়ার বিজনেস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আয়াদ আল আমির বলেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কোম্পানি অ্যাকোয়া পাওয়ার। বাংলাদেশে এই কোম্পানি বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আসছে। তবে এদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। বাংলাদেশ এখন সৌদি আরবের কৌশলগত অংশীদার এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, উদীয়মান অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। এর অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশ বর্তমানে বিদ্যুৎ আদান-প্রদানে সীমান্ত দেশের সঙ্গে চুক্তি করছে। যা বাংলাদেশ আগে থেকেই করে আসছে। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে আরও নীতি সহযোগিতা থাকা লাগবে।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সরকার এমন কোনো অপ্রত্যাশিত নীতি কার্যক্রম গ্রহণ করবে না, যা বিনিয়োগের বিপক্ষে যেতে পারে। বিদেশিদের বিনিয়োগ এই দেশের আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকবে।
 তৈরি পোশাক খাত নিয়ে আয়োজিত পর্বে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, উত্তম বিনিয়োগের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পণ্যে বৈচিত্র্য, নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতা, ব্যবসা সহজ করার সূচকের অগ্রগতি এবং কূটনৈতিক পলিসি গ্রহণ করতে হবে।
বিকেএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক খাতে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো পরিচালনায় দক্ষ জনশক্তি দরকার।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম পারভেজ বলেন, ইইউ’র বাজারে বাংলাদেশ এখন জিএসপি প্লাস সুবিধা পাচ্ছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও এই সুবিধা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করি। তাই এ বিষয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে ২০৩৫ সালে বিশ্বের উন্নত ৫টি শহরের মধ্যে অন্যতম অবস্থানে থাকবে ঢাকা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সব সময় ঢাকার যানজটের কথা বলে থাকেন। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেস, মেট্রোরেল, পাতাল রেলসহ যেসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন হবে। তখন নির্বিঘ্নে চলাচল করা যাবে। কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরে আতিকুল ইসলাম বলেন, পোশাক খাতে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।  বিশেষ করে কাস্টমস এবং এনবিআর সংক্রান্ত জটিলতা। এগুলো দূর করতে হবে। এনবিআরকে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে। দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অফিসিয়াল কাজে কাগজবিহীন পদ্ধতি চালু করতে হবে। এখনো পণ্য রপ্তানিতে ৭৭ দিন লিড টাইম লাগে। এই সময় কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ভারত, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১৫টি দেশের ২ হাজার ৩৩২ জন অংশগ্রহণকারী নিবন্ধন করেছেন। অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও ফাইন্যান্সিয়াল সেবা, তথ্য-প্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিকস উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ, পাট-বস্ত্র এবং ব্লু-ইকোনমি- সম্ভাবনাময় এই ১১টি খাতকে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য চিহ্নিত করেছে সরকার।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর