আফ্রিকা থেকে কেউ দেশে এলে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’-এর পর এবার ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’ ক্যাম্পেইন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৬০ বছরের উপরে অত্যন্ত অসুস্থ তাদের বুস্টার ডোজ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওমিক্রন নিয়ে কোভিড প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় গঠিত সমন্বয় কমিটির বৈঠকের পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা জানান।
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আফ্রিকা থেকে লোকজন আসার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যারা আসবে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সশস্ত্র বাহিনী বিষয়টি ম্যানেজ করবে। অন্য দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি না পাওয়া পর্যন্ত ওইসব দেশ থেকে করোনা নেগেটিভ টেস্ট রিপোর্ট নিয়ে আসতে হবে। সংক্রমণ বাড়লে কোয়ারেন্টিন করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা টেস্ট ৭২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টা বা ২৪ ঘণ্টা করার চিন্তা করা হচ্ছে। বর্ডারে কঠোর নজরদারি করা হবে। পার্শ্ববর্তী দেশে যাতায়াত কমিয়ে আনা যায় কিনা সে চিন্তা চলছে। জাহিদ মালেক বলেন, করোনা মোকাবিলায় জেলা কমিটিকে চিঠি দেয়া হবে। তারা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে দিবে যেন সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান সীমিত করা হয়। নতুন করে যেন অনুষ্ঠান হাতে নেয়া না হয় সে ব্যাপারে নজর দেয়া হবে। মসজিদে যেন আলোচনা হয়, ভুল মেসেজ যেন না যায়।
মন্ত্রী বলেন, আফ্রিকা থেকে গত এক মাসে ২৪০ জন এসেছে। তারা অনেকে মোবাইল বন্ধ রেখেছে, ঠিকানা ভুল দিয়েছে। ফলে তাদের ট্রেস করা কঠিন হচ্ছে। স্কুলের দিন যেন না বাড়ানো হয় সে ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলবে। বাসে মাস্ক পরার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। দাপ্তরিক সভা ভার্চ্যুয়াল করার জন্য সব মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নির্দেশনা দেয়া হবে।
ইউরোপের সঙ্গে ফ্লাইট সীমিত হবে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ইউরোপে ছড়িয়েছে অল্প। ঢালাওভাবে ফ্লাইট বন্ধ করতে পারবো না। যে ১৫/২০ দেশে ছড়িয়েছে তাদের ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজ দেয়া হয়ে গেছে। গতবার কোয়ারেন্টিনের সময় অনেকে হোটেলে থাকেনি এই বিষয়ে শক্ত হওয়ার জন্য বলেছি।
৬০ বছরের উপরে অত্যন্ত অসুস্থ তাদের বুস্টার ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিমানবন্দরে পিসিআর, র?্যাপিড টেস্ট জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেল্টা ভাইরাস যেভাবে ছড়িয়েছে অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাই না ফের হোক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে সবকিছু নাই। সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। আবার যেন লকডাউন না হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে করোনা পরীক্ষার ফি মওকুফের সুযোগ নাই। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ফি মওকুফ করা হবে। ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন চলবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে। সভা-সমাবেশ সীমিত করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জনগণকে টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করতে প্রতিটি সরকারি দপ্তরে ‘নো ভ্যাকসিন, নো সার্ভিস’- ক্যাম্পেইন চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি করতে পারলে টিকার কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। বিষয়টি এখন চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী। দেশে শিক্ষার্থী ও বস্তিবাসীদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব পর্যায়েই টিকা দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারপরও দেখা যাচ্ছে, এখনও অনেকে টিকা নেননি এবং তাদের টিকা নেয়ার আগ্রহও কম। শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষার্থীদের টিকায় যে পর্যায়ে আশা করেছিলাম সে পর্যায়ে যেতে পারিনি। ৭ থেকে ৮ লাখ টিকা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম আরও বেশি দেয়া হবে। চেষ্টা করছি যাতে এটা বাড়ানো যায়। এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ছিলেন, তাদের বলেছি আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করুন।