খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন গত মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে মারা গেছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, এ মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তার মৃত্যুর আগে তিনি লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন কুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং লালন শাহ হলের প্রভোস্ট ছিলেন। সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে। ওই প্যানেলের সদস্যেরা প্রভোস্ট সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধাঘণ্টা ড. সেলিম হোসেনের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। পরে অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য বাসায় যান। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, সেলিম হোসেন বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শিক্ষক ও ছাত্ররা জানান, ড. সেলিম একজন অত্যন্ত সৎ ও মেধাবী শিক্ষক ছিলেন। ছাত্রবান্ধব হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতিক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুতে আমরা স্তব্ধ হয়ে গেছি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এ ঘটনার তদন্ত করা হবে। এরপর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। কুয়েট ছাত্রকল্যাণ পরিষদের পরিচালক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। কুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মনোজ কুমার বলেন, ড. রজিবুল আহসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তাদের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, ড. সেলিম হোসেনের মৃত্যুতে কুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।