সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দুই শতাধিক দরিদ্র পরিবার কুমড়ার বড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। অর্ধশত বছরের এ ঐতিহ্য এখন গৃহস্থের বাড়ির আঙিনা ছাড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবেও উৎপাদন হচ্ছে। আশ্বিন থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে কুমড়ার বড়ি তৈরির কাজ।
জানা গেছে, অনন্য স্বাদের এ কুমড়াবড়ি তৈরি হয় ডাল আর কুমড়ার সংমিশ্রণে। হরেক রকম ডাল দিয়ে এ বড়ি তৈরি হলেও অ্যাঙ্কর ও মাসকলাই ডালের বড়ির চাহিদা একটু বেশি। উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার কুমড়ার বড়ি বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এছাড়া উপজেলার পোরজনা জামিরতা ধীতপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম মিলিয়ে দুই শতাধিক পরিবার কুমড়ার বড়ি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। উপজেলার গাড়াদহ ইউনিয়নের তালগাছি গ্রামের কুমড়াবড়ি উৎপাদনকারী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে এই পেশায় আছি।
একটা সময় অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আগে সারাদিন ডাল ভিজিয়ে রেখে শিলপাটা দিয়ে বেঁটে বড়ি দিতে হতো। এতে সময় লাগতো অনেক বেশি। এখন শিলপাটার বদলে ডাল মেশিন দিয়ে ভাঙানো হয়। এর ফলে আমাদের খাটুনি কমেছে ও সময় বেঁচে যাচ্ছে। এতে এখন বেশি বড়ি তৈরি করতে পারছি।’ তালগাছি গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, পরিবারের পুরুষ সদস্যরা সাধারণত ডাল ভিজিয়ে মেশিনে গুঁড়া করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে বড় গামলা বা বালতিতে ডালের গুঁড়া, পাকা চালকুমড়া, কালোজিরা, গোলমরিচ এবং মসলা মিশিয়ে সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি তৈরি করা হয়। এরপর টিনের বা কাঠের পিঁড়িতে পামওয়েল তেল মাখিয়ে কাপড়ের সাহায্যে জিলাপি তৈরির মতো বড়ি করে সাজিয়ে শুকাতে দেয়া হয়। ৩-৪ দিন কড়া রোদে শুকালে প্রস্তুত হয় সুস্বাদু কুমড়ার বড়ি। এ কাজগুলো নারীরাই করেন। একজন গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কেজি ডালের বড়ি তৈরি করতে পারেন।
ভোর থেকে শুরু করে সকাল ৯টার মধ্যে বড়ি তৈরি বা রোদে দেয়ার কাজ শেষ হয়। তাই বাড়ির দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে নারীরা এই বাড়তি আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন।