একটি হত্যাকা-কে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে খুনিরা। খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে এখন নিহতের স্বামীসহ সন্তানকে গৃহহারা করার চক্রান্তে মেতেছে ওই খুনি চক্রের সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে স্ত্রী হত্যার ঘটনায় স্বামী যাতে কোনো আইনের আশ্রয় নিতে না পারে সেই কারণে তার ওপর মানসিক, শারীরিক এবং অর্থনৈতিক অর্থাৎ চতুর্মুখী চাপ সৃষ্টি করে তাকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে নিহত নাসরিন আক্তারের স্বামী ও তার স্বজনরা অভিযোগ করেন। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় নিহতের স্বামী সাদিকুজ্জামান খান মিন্টু বাদী হয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
নিহত নাসরিন আক্তারের প্রতিবেশীরা জানান, মাসুমা আক্তার নয়নের স্বামী দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় সে পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। তার ঘরে প্রেমিকের যাতায়াত ছিল অবাধ। বৃদ্ধ শ^শুর ও শাশুড়ি এসব দেখলেও প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। কিন্তু ওই বাসায় বসবাসকারী ননদ নিহত নাসরিন আক্তার ভাবীর এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় প্রায়ই ননদ-ভাবীর মধ্যে ঝগড়া হতো।
বহুবার মাসুমা আক্তার তার ননদ নাসরিন আক্তারকে মারপিট করেছে বলে প্রতিবেশীরা জানান। একপর্যায়ে ঘটনার দিন ১৫ই জুন সকাল ১০টার দিকে মাসুমা আক্তারের ঘরে তার প্রেমিক জনৈক হামিদ নামের এক ব্যক্তি প্রবেশ করে। এই ঘটনা দেখে নাসরিন আক্তার প্রতিবাদ করে বাইরে থেকে ঘরের ছিটকানি লাগিয়ে দেয়। এতে করে মাসুমা ও তার প্রেমিক দু’জনে মিলে নাসরিন আক্তারকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে। অবস্থা বেগতিক দেখে প্রথমে তারা বাসার মধ্যে নাসরিন আক্তারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। কিন্তু অবস্থা গুরুতর হলে শেষ পর্যন্ত ১৫ই জুন সন্ধ্যার দিকে গোপনে তাকে স্থানীয় আল-হেলাল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ সময় নাসরিন আক্তারের গায়ের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের দাগ ছিল এবং গলায় চেপে ধরারও দাগ ছিল স্পষ্ট। এখানে ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরই নাসরিন আক্তার মারা যায়। এর পর মাসুমা ও তার স্বজনরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে লাশ তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায় এবং কাউকে না জানিয়ে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বরের সরকারি গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করে।
এদিকে এই মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি স্বামী মিন্টু ও তার তার ছেলে শিবলী নোমান। ঘটনার এক সপ্তাহ পরে মিন্টু আল-হেলাল হাসপাতালে যান এবং তার স্ত্রী নাসরিন আক্তারের ডেথ সার্টিফিকেট তোলেন। ওই ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে “ঝঁংঢ়বপঃবফ” (সাসপেকটেড)। অর্থাৎ তার মৃত্যু স্বভাবিক নয়।