দেশের প্রথম ৬ লেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণ হচ্ছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর কালনা ফেরিঘাটের অদূরে পুর্বের দিকে মধুমতি নদীতে। ১৪টি পিলারের উপর নির্মাণাধীন সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। পদ্মা সেতুর চেয়েও ১ লেন বেশি নির্মাণাধীন সেতুর মাঝখানের ৪টি লেন দিয়ে সার্বক্ষণিক ভারী যানবাহন চলাচল করবে এবং সেতুর দুই পাশের দু’টি লেন দিয়ে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলসহ নানান প্রকার যানবাহন চলাচল করবে। প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির উভয় পাশে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার মজবুত অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি করা হবে। প্রয়োজনে টাকার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। জাইকার সহযোগিতায় ও দেশীয় অর্থে ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এ সেতু নির্মাণের কাজ করছেন। নির্মাণাধীন সেতুটি চালু হওয়ার পর বেনাপোলস্থল বন্দরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে দূরত্ব যেমন কমে আসবে ঠিক তেমনিভাবে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এক অনন্য দৃষ্টান্ত বয়ে আনবে এই কালনা সেতু। একইসঙ্গে বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানি পণ্য সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পরিবহনে সুবিধা পাবে রপ্তানিকারকরা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী সকল প্রকার ইঞ্জিনচালিত যানবাহন পদ্মা সেতু থেকে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে সরাসরি কালনা সেতুতে পৌঁছাতে পারবে।
যা বর্তমানে পদ্মা নদীর পাড় মাওয়া ফেরিঘাট থেকে কালনা ফেরিঘাট পর্যন্ত আসতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। জানা গেছে, ৩ বছর আগে শুরু সেতুটির নির্মাণ কাজ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। সরজমিন পরিদর্শনকালে সেতুর দুইপাড়ের মানুষের অভিযোগ, সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজের গতি যদি এভাবে অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী ২২ সালের মধ্যেও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবে না নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। তারা বলেন, আগামী ২২ সালের জুন মাসের দিকে পদ্দাসেতু চালু হওয়ার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে যদি এই কালনা সেতু নির্মাণসহ চালু করা না হয় তাহলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে। সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে কালনায় নিয়োজিত সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলছেন, প্রথমে ৪ লেনের সেতুর ডিজাইন-প্ল্যান তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবতন করে ৪ লেনের সেতুর স্থলে নতুন করে ৬ লেন সেতুর ডিজাইন-প্ল্যান তৈরি করতে বেশ সময় লাগায় সেতুর নির্মাণ কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তা ছাড়া বছরব্যাপী করোনার আতঙ্কে শ্রমিকরা ঠিকমতো কাজও করেনি। ফলে. এই দুটি কারণে কালনা সেতুর নির্মাণ কাজ বিলম্ব হয়েছে। তবে, ইতিমধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ শেষ করেছে সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগের এমন দাবি। তারা বলেন, সেতুটির স্টীল ফ্রেমের কাজ চলছে দেশের বাইরে ভিয়েতনামে। প্রতিদিন এক ডজনেরও বেশি অভিজ্ঞ প্রকৌশলী সেতুর নির্মাণ কাজ পযবেক্ষণ করছেন এমন কথা উল্লেখ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো, আশরাফুজ্জামান বলেছেন, সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে শতাধিক শ্রমিক কাজে লাগিয়েছে।