বিশ্বজমিন

দিল্লিতে পুতিন-মোদি বৈঠক আজ, বিশ্ব রাজনীতিতে কি প্রভাব ফেলবে!

মানবজমিন ডেস্ক

২০২১-১২-০৬

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সাক্ষাত করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। ভারতে রাশিয়ার যেকোনো প্রেসিডেন্টের সফর সব সময়ই এক নষ্টালজিয়া সৃষ্টি করে। শীতল যুদ্ধের সময়ে মস্কো-দিল্লি সম্পর্ক এবং তারপর থেকে সেই সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। বৈশ্বিক কূটনীতিতে এক সফল ইতিহাসের অংশীদার হিসেবে দেখা হয় তাদের মধ্যকার সবসময়ের অংশীদারিত্বকে। একই সঙ্গে সোমবার দিল্লিতে যখন ভ্লাদিমির পুতিন ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে বসছেন, তখন তা আরো উচ্চ অবস্থান নির্দেশ করে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা চুক্তি, বাণিজ্য ঘোষণা, করমর্দন, মোদির প্রচলিত আলিঙ্গনের মতো বিগ টিকেট থাকা সত্বেও দুই দেশকে গুরুত্বর কিছু চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু দুই দেশই সাম্প্রতিক সময়ে ও বছরে ভূরাজনৈতিক যে পছন্দ বাছাই করেছে তা অনেকটা ভিন্ন। তাদের গৃহীত পদক্ষেপ প্রভাবিত করবে আঞ্চলিক এবং বিশ্ব রাজনীতিকে।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এবং চীন ফ্যাক্টর
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সম্পর্ক দিল্লি-মস্কো সম্পর্কে গায়ে কাঁটা দিতে পারে। একই ঘটনা গত দশকেও হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে যখন ভারত সফর করেন, তখন তার জন্য বিশাল র‌্যালি আয়োজন করেন নরেন্দ্র মোদি। মোদির এই কর্মকাণ্ডকে ওয়াশিংটনের প্রতি অকাট্য সমর্থন হিসেবে দেখা হয়। অন্যদিকে কয়েক বছর ধরে ওয়াশিংটনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অব্যাহত অবনমন হয়েছে। এমন অবস্থায় মোদির এসব কর্মকাণ্ডের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকতে পারে মস্কো। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ প্রকাশ্যে কথা বলেছেন যখন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার জোট কোয়াডে যোগ দিয়েছে ভারত। কোয়াড জোট থেকে বলা হয়েছে এটি একটি বেসামরিক জোট। এটি কোনো বিশেষ দেশের উদ্দেশে গঠন করা হচ্ছে না। কিন্তু এসব কথায় সের্গেই ল্যাভরভ কর্ণপাত করেছেন বলে মনে হয় না। তিনি বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে অনুমোদন দেয়ার জন্য চীনবিরোধী গেমে ভারতকে যুক্ত করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে পশ্চিমারা। ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনীল ত্রিগুনায়েত মস্কোতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার জন্য কোয়াড হলো একটি রেড লাইন। দিল্লি বৈঠকে দুই নেতার মধ্যে যা নিয়ে আলোচনা হবে তার বেশির ভাগই হবে এই নিয়ে। মস্কো কোয়াড নিয়ে উদ্বিগ্ন। এর কারণ তারা কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। এশিয়া অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক স্বার্থ এবং অর্থনীতিকে নিরাপদ করতে চীনের ঘনিষ্ঠ হয়েছে রাশিয়া। একই সঙ্গে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমাদের আধিপত্যকে টেক্কা দেয়াও উদ্দেশ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এ কারণে বেইজিং এবং মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। পরিস্থিতিকে আরেকটু জটিল করে তুলেছে ভারত-চীন সম্পর্ক। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে এই সম্পর্ক কঠিন হয়ে উঠেছে। ওই সংঘর্ষে ভারতের ২০ সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। পরে চীন স্বীকার করে এতে তাদের কয়েকজন সেনা নিহত হয়েছেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক উইলসন সেন্টারের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ভারত-রাশিয়া সম্পর্কে বড় রকমের হুমকি নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। এর প্রেক্ষিতে এই সম্পর্ককে বিশেষ অবস্থানে নিয়ে যেতে পুতিনের এই সফর গুরুত্বপূর্ণ। কুগেলম্যান বলেন, আমার মনে হয় এই সফরের লক্ষ্য হলো নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন করে গড়ে তোলা মস্কোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যদিও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্য কথা বলে।

তা সত্বেও কুগেলম্যান এবং ত্রিগুনায়েতের মতো বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি শক্তিশালী, যেখানে একে অন্যের উদ্বেগের বিষয়ে নজর দিতে হবে। তারা যেসব ক্ষেত্রে দৃষ্টি দিতে পারে তার মধ্যে সহযোগিতা অন্যতম। এসব বিষয়ের মধ্যে একটি হতে পারে আফগানিস্তান। ভারতের প্রতিবেশী এবং চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী পাকিস্তান বর্তমানে আফগানিস্তান ইস্যুতে কৌশলগত অবস্থানে অনেক ভাল স্থানে আছে। এ ইস্যুতে তাদের শিকড় অনেক গভীরে। একই সঙ্গে তারা রাশিয়া, ইরান এবং চীনের সঙ্গ অনানুষ্ঠানিক একটি জোট গঠন করেছে বলে মনে হয়।

আফগানিস্তানে যে ‘গ্রাউন্ড’ হারিয়েছে দিল্লি, তা পুনরুদ্ধারের জন্য মস্কো সাহায্য করতে পারে দিল্লিকে। এই দুটি দেশই আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে অভিন্ন উদ্বেগ আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক র‌্যান্ড করপোরেশন নামের থিংকট্যাংকের সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষক ডেরেক গ্রোসম্যান বলেন, এক্ষেত্রে তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্ক নিয়ে রাশিয়া ও ভারত উভয়েই উদ্বিগ্ন। আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসের যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে এবং তার প্রভাব রয়েছে এই দুটি দেশে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন দুই দেশই। ফলে নয়া দিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে শক্তিশালী একটি চুক্তির ক্ষেত্র হলো আফগানিস্তান।
ভারত ও রাশিয়া বেশ কিছু বহুজাতিক ফোরামের অংশীদার। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিকস (এতে জড়িত ব্রাজিল, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা), সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এতে জড়িত চীন, পাকিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো) এবং আরআইসি (এতে যুক্ত রাশিয়া, ভারত ও চীন)।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status