ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে জলোচ্ছাস ও ভারী বৃষ্টিপাতে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলা জেলে পল্লীর ২ কোটি টাকার বেশি শুঁটকি মাছের ক্ষতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে মোংলা উপজেলায় বেশ কয়েকটি চিংড়ি খামার ও বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সুন্দরবন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের সাগর পাড়ে ১৩টি চর নিয়ে দুবলা অস্থায়ী শুঁটকিপল্লী। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুমে বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দুবলা জেলেপল্লীতে প্রতিবছর প্রায় ২০-২৫ হাজার জেলে-মহাজন শুঁটকি মাছ আহরণ করে থাকেন। সাগর থেকে ধরা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। শুঁটকির জন্য সুন্দরবনের এই দুর্গম চরে গড়ে তোলেন ৫ মাসের অস্থায়ী বসতি। জলোচ্ছাসে শুঁটকিপল্লীর জেলেদের ২ থেকে ৩ হাজার সাবাড়ে (মাছ শুকানোর মাঠ) থাকা প্রায় ১২ হাজার টন শুঁটকি মাছ সাগরে ভেসে গেছে। তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে আরও অনেক শুটকি মাছ।
প্রাথমিক হিসেবে জেলেদের ২ কোটি টাকার বেশি শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। এ বার অসময়ে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের বৈরী আবহাওয়ায় এখানকার জেলেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দুবলারচরের মাঝেরকিল্লা থেকে চট্টগ্রামের জাহিদ বহদ্দার ও শরণখোলার জেলে ইউনুস আলী ফকির জানান, গত রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ দুবলারচর অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। এ সময় প্রবল বর্ষণের সঙ্গে ৪ ফুট উচ্চতা জলোচ্ছাসে মাঝেরকিল্লাসহ আশপাশের চরের কোটি টাকার শুঁটকি মাছ সাগরে ভেসে গেছে। বৃষ্টিতে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি মাছ ভিজে নষ্ট হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ায় জেলেদের অস্থায়ী ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জেলেরা দুর্ভোগে পড়েছেন। দুবলার শুঁটকিপল্লীর মহাজন রামপাল উপজেলার শহিদ মল্লিক বলেন, আবহাওয়া খারাপ হওয়ার আগেই সাগর থেকে ধরে আনা ১০ থেকে ১৫ হাজার টন কাঁচা মাছ এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোয়ারের সময় চরের সবকিছু ডুবে যাচ্ছে। সুন্দরনের দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, জেলেদের শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে ৩ হাজার সাবাড়ে থাকা প্রায় ১২ হাজার টন কাঁচা মাছ ভেসে গেছে। তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে আরও অনেক শুঁটকি মাছ। পানিতে জেলেদের থাকার এবং রান্না করার স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা শুঁটকিপল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রহলাদ চন্দ্র রায় জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে দুবলার আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারিকেলবাড়ীয়া ও শ্যালারচর ৩ ফুটের বেশি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রাথমিক হিসেবে জেলেদের ২ কোটি টাকার বেশি শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় এখনো শত শত ফিশিং ট্রলার ও নৌকা সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।