ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত দুইদিনের টানা বর্ষণে শ্রীনগরে প্রায় ১ হাজার হেক্টর আলু ও সরিষা ক্ষেত পানির নিচে। সদ্য রোপণ করা এসব জমির আলু বীজ ও সরিষা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে বোর ধানের বীজতলা। গত বছর আলুর দাম না থাকায় চাষিরা লোকসানে পড়েন। এ বছর লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবে এই ধারণায় জমি, স্বর্ণালংকার বন্ধকসহ চড়া সুদে টাকা এনে পুঁজি সংগ্রহ করে আলু চাষে নামে। কিন্তু শুরুতেই এতো বড় ধাক্কা সামলে ওঠা বেশির ভাগ চাষির জন্য দুরহ হয়ে যাবে। গতকাল দুপুরে সরজমিন উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের সালেপুর, বীরতারা, মাশাখোলা, আটপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব দেউলভোগসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র।
আলুর জমির ওপরে বৃষ্টি পানি জমে নৌকা চলার উপক্রম হয়েছে।
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অনেককে দেখা গেছে সেচ দিয়ে জমির পানি সরানোর বৃথা চেষ্টা করছে। কামাল শেখ নামের এক আলু চাষি জানান, জানি পানি সেচে কোনো লাভ হবে না, তারপরও মনকে মানাতে পারছি না। গত বছর লোকসান হয়েছে। এ বছর ধার দেনা করে চাষে নেমেছিলাম। ভেবেছিলাম এ বছর দাম ভালো পেলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু শুরুতেই এমন হয়ে গেল। কথাগুলো বলতে বলতে তার গলা ধরে আসে। তিনি আরও জানান, প্রায় ৭ বিঘা জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে সার, বীজ, শ্রমিক ও জমির দামের খরচ হয়েছে প্রায় লাখ টাকা। এখন জমির পানি নেমে গেলেও সার, বীজ, শ্রমের পেছনে নতুন করে খরচ হবে। এই টাকা কোথায় পাব?
শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার শান্তনা রাণী জানান, এ বছর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে ২ হাজার ২শ’ হেক্টর। এরইমধ্যে সরকারি হিসাবে প্রায় ৬২০ হেক্টর জমিতে আলু বপন করা হয়েছে। পুরোটাই এখন পানির নিচে। সরিষা আবাদ করা হয়েছে ৪৬৫ হেক্টর জমিতে। এর পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। সঙ্গে বোর ধানের বীজতলাও নষ্ট হচ্ছে। পানি না সরে যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। ক্ষতির মধ্যে পড়া কৃষকদের প্রণোদনার জন্য ঊর্ধ্বতনদের কাছে আবেদন করা হবে। শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণব কুমার ঘোষ জানান, অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চাষিরা দুর্ভোগে পড়েছেন। কৃষি অফিসকে সঙ্গে নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে বসে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তাদেরকে অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্রদানের বিষয়ে জোর দেয়া হবে।