এবি ব্যাংকের ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা দুর্নীতির মামলায় ব্যাংকটির ১৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। দুই আসামির জামিন চেয়ে আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন উচ্চ আদালত। আগামী সাতদিনের মধ্যে মামলার অন্য ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি এই ১৫ জন যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। মঙ্গলবার দুই আসামির জামিন চেয়ে আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
১৫ আসামি হলেন- এরশাদ আলী, এবিএম আব্দুস সাত্তার, আনিসুর রহমান, রুহুল আমিন, ওয়াসিকা আফরোজী, মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান, সালমা আক্তার, মোহাম্মদ এমারত হোসেন ফকির, তৌহিদুল ইসলাম, শামীম এ মোরশেদ, খন্দকার রাশেদ আনোয়ার, সিরাজুল ইসলাম, মাহফুজ-উল-ইসলাম, মশিউর রহমান চৌধুরী, শামীম আহমেদ চৌধুরী। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন- গোলাম আব্বাস দুলাল। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
পরে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় এবি ব্যাংকের ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। এই সূত্র ধরে গত ৯ই জুন একটি মামলা হয়। ওই মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হয়। এই ১৭ জনের মধ্যে আসামি শহীদুল ইসলাম ও আব্দুর রহিম আগাম জামিনের আবেদন করে। আগাম জামিনের পরে তারা নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। নিম্ন আদালত তাদেরকে জেলে পাঠিয়ে দেন। এরপর জেল থেকে তারা জামিন চেয়ে নিয়মিত আপিল করেন। মঙ্গলবার আদালতে শুনানি শেষে দু’জনের জামিন প্রশ্নে রুল দেন। একই সঙ্গে আগামী সাতদিনের মধ্যে অন্য ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি এই ১৫ জন যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। গত ৮ই জুন দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জাল কার্যাদেশ এবং অবৈধ ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের মাধ্যমে ১৭৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে এবি ব্যাংকের সাবেক দুই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মসিউর রহমান চৌধুরী, শামীম আহমেদ চৌধুরীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে এরশাদ ব্রাদার্স করপোরেশনের মালিক মো. এরশাদ আলীকে। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে একে-অন্যের সহায়তায় জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে জাল কার্যাদেশ প্রস্তুত করে ৬টি জাল কার্যাদেশের বিপরীতে ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া মামলায় উল্লিখিত এবি ব্যাংক কাকরাইল শাখার কর্মকর্তারা প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া সাতটি অবৈধ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে আরও ১০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করে, তা উত্তোলনপূর্বক আত্মসাৎ করেন। সব মিলিয়ে আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আসামিদের মধ্যে এবি ব্যাংকের এভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার আব্দুর রহিম ও ভিপি শহিদুল ইসলাম গত ২১শে সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন না দিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। নির্দেশ মতো গত ৩রা অক্টোবর তারা ঢাকার জ্যেষ্ঠ মহানগর বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। কিন্তু বিচারক কেএম ইমরুল কায়েশ তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে হাইকোর্টে জামিন চান আব্দুর রহিম ও শহিদুল ইসলাম। সে আবেদনটি মঙ্গলবার শুনানির জন্য উঠলে হাইকোর্ট বাকি ১৫ আসামির বিষয়ে জানতে চান। তখন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ অলম খান বলেন, তারা পলাতক। এরপর আদালত ১৫ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।