ইউরোপের দেশ মাল্টায় বসে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন সিলেটের লায়েক আহমদ। লোক নেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। দক্ষিণ সুরমায় নিকট আত্মীয়দের দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন এই প্রতারণা। স্বপ্নের দেশে যেতে সরল বিশ্বাসে টাকা দিয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। তার প্রতারণার শিকার হওয়াদের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী ব্যবসায়ী সাহেদ আহমদ গত রোববার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে মাল্টা প্রবাসী দক্ষিণ সুরমার মোল্লারগাঁও গ্রামের লায়েক আহমদ, তার চাচাতো ভাই একই গ্রামের নুর মিয়া ও লায়েকের পিতা তবারক আলীকে। এর আগে সাহেদ আহমদ সিলেটের লিগ্যাল এইড এবং পরবর্তী সময়ে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারপ্রার্থী হন। লায়েক কয়েক বছর আগে মাল্টায় যান।
এরপর সেখানে বসবাস শুরু করেন। গত কয়েক বছর ধরে সিলেটের অধিকাংশ যুবক মাল্টামুখী হয়েছেন। ইউরোপের দেশ হওয়ার কারণে মাল্টার ওয়ার্ক পারমিট বা স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে সেখান থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসের সুযোগ খুঁজেন। এ কারণে মাল্টার ওয়ার্ক পারমিট ও স্টুডেন্ট ভিসার ডিমান্ড অনেক বেশি। আর এই সুযোগে মাল্টায় অবস্থারনত লায়েক আহমদ সিলেট থেকে লোক নেয়ার ধান্দা শুরু করেন। দেশে থাকা চাচাতো ভাই নুর মিয়া হচ্ছে লায়েকের প্রধান সহযোগী। মামলা সূত্রে জানা গেছে- দক্ষিণ সুরমার খিদিরপুর এলাকার দেওয়ান আরশাদ খান, সামিউল ইসলাম মুন্না ও তেলিরাই গ্রামের রাজন মিয়া ২০১৯ সালের শেষদিকে মাল্টা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় মাল্টায় অবস্থান করা লায়েকের। দেশে থাকা চাচাতো ভাই নুর মিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগের পর তিনজনকে ২১ লাখ টাকার বিনিময়ে মাল্টা নেয়ার জন্য আশ্বাস দেন লায়েক। এবং তিনজনকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বললে তারা তিনজনই সিলেটের ব্যবসায়ী সাহেদ আহমদের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর ৪ লাখ টাকা, একই মাসের ১৫ তারিখ ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা নুর মিয়ার হাতে তুলে দেন। টাকা নেয়ার পর রেস্টুরেন্টে ওয়েটার ভিসায় মাল্টা নেয়ার জন্য লায়েক তিন মাসের সময় চান। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি তাদের মাল্টা নিতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি সিলেটের ওই তিন যুবকের সঙ্গে যোগাযোগও ছেড়ে দেন। এ সময় দেশে থাকা লায়েকের চাচাতো ভাই নুর মিয়া ও পিতা তবারক আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা চলতি বছরের ২০শে জুন দুই লাখ টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা এক মাসের মধ্যে ফেরত দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেশে থাকা নুর মিয়া ও তবারক আলী টাকা দিতে টালবাহানা শুরু করলে এলাকার ওপর হাজরাই গ্রামের সালিশ ব্যক্তিত্ব আনছারুজ্জামানের কাছে বিচার প্রার্থী হন সাহেদ সহ-প্রতারণার শিকার তিন যুবক। কিন্তু চেষ্টা করেও আনছারুজ্জামান টাকা উদ্ধার করে দিতে পারেননি। পরবর্তীতে মধ্যস্থতাকারী সাহেদ আহমদ সিলেটের লিগ্যাল এইড’র কর্মকর্তার কাছে এ ঘটনার বিচার প্রার্থী হন। এ নিয়ে লিগ্যাল এইড’র এক কর্মকর্তা উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসলে লায়েকের সহযোগী নুর মিয়া ওই তিন যুবকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের কথা স্বীকার করেন। টাকা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করলেও পরবর্তীতে তারা লিগ্যাল এইড’র ডাকে সাড়া দেননি। এদিকে মাল্টায় লোক নেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগ এনে গত ২২শে নভেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন সাহেদ আহমদ। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে প্রতারণাসহ অভিবাসন আইনে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা প্রেক্ষিতে গত রোববার রাতে কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলা রেকর্ড করে। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা গ্রহণের পর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। এদিকে মামলার বাদী সাহেদ আহমদ জানিয়েছেন- লায়েক আহমদ মাল্টায় বসে সিলেটে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। সিলেটে তার প্রধান সহযোগী চাচাতো ভাই নুর মিয়া। তারা সহজ-সরল যুবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যোগাযোগ ছেড়ে দেয়। এতে অনেকেই নিঃস্ব হচ্ছেন। ওই তিন যুবক প্রতারিত হওয়ার পরেও আরও কয়েকজন যুবক ওদের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন। তিনি জানান, তারা যে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সেটি লিগ্যাল এইড’র কর্মকর্তার সামনে স্বীকার করেছেন। ওদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার ও প্রতারণা বন্ধের দাবি জানান সাহেদ আহমদ। এদিকে অভিযোগে নুর মিয়া জানিয়েছেন, ‘লায়েকের সঙ্গে ওই তিন যুবক সরাসরি যোগাযোগ করেছেন। তিনি বিষয়টি জানলেও সম্পৃক্ত ছিলেন না। লায়েকের পরিবার এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’