দেশ বিদেশ

নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে বালাইনাশক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো

স্টাফ রিপোর্টার

২০২১-১২-০৯

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষিখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আর কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পেস্টিসাইড বা বালাইনাশক উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু পেস্টিসাইড উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে নানান প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দেশের পেস্টিসাইড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমানে পরিস্থিতি তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন নামে একটি সমিতি গঠনের লক্ষ্যে বুধবার রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তারা বলেন, বর্তমানে ২০১০ সালের পুরনো একটি প্রজ্ঞাপন এবং পেস্টিসাইড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি কমিটির (পিটিএসি) অসঙ্গতিপূর্ণ শর্তগুলো দিয়ে এই খাতটি চালানো হচ্ছে। যদিও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পেস্টিসাইড সংক্রান্ত সর্ব শেষ যে আইন প্রণীত হয়, সেখানে দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই। আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সুপারিশেও দেশীয় কৃষি শিল্পের বিকাশের স্বার্থে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান আমদানির জন্য সোর্স উন্মুক্ত করার সুপারিশ উল্লেখ রয়েছে।  তা সত্ত্বেও ২০১৫ সাল থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কারিগরি পরামর্শ প্রদানকারী কমিটি পিটিএসি দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য একাধিক বিদেশি সোর্স (প্রতিষ্ঠান) পছন্দের সুযোগ রুদ্ধ করে রেখেছে। তারা শর্ত দিয়ে উল্লেখ করেছে যে, ‘বালাইনাশক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির তারিখ হইতে দুই বছরের মধ্যে রেজিস্ট্রার্ড বালাইনাশক ম্যানুফেকচারার বা সোর্স পরিবর্তনের আবেদন করা যাবে না’। তারা জানান, এই শর্ত বিদ্যমান আইনের পুরোপুরি লঙ্ঘন। অথচ দেশে ব্যবসায় নিয়োজিত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম ঠিক উল্টো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে দেশীয় কোম্পানিগুলো প্রতি পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানান তারা।
তারা অভিযোগ করে জানান, দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদিত পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও চরম বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। বৈষম্যমূলক ওই শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দেশীয় কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করতে পারবে না। এই শর্তের কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে স্থানীয় বাজারের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে। এই শর্ত প্রচলিত আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এই ধরনের শর্তের কারণে দেশীয় কোম্পানিগুলোর আন্তর্জাতিক বাজার যাচাইয়ের কোনো সুযোগ থাকছে না। তাই দেশীয় পেস্টিসাইড কোম্পানিগুলোকে অত্যন্ত চড়া মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান। এতে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িক অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, এসব করা হয়েছে শুধুমাত্র একটি মহল বিশেষকে সুবিধা দেয়ার জন্য। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। আর এর সুযোগ নিচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। তারা একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা এদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশীয় পেস্টিসাইড কোম্পানিগুলোর বিকাশ এবং দেশের টাকা দেশেই রাখতে পিটিএসি কমিটির এমন বৈষম্যমূলক প্রতিবন্ধকতা দূর করা জরুরি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশি সোর্স উন্মুক্ত থাকায় দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতামূলক দামে কাঁচামাল ও অন্য সহায়ক উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। এ কারণে দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো আমাদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ওষুধ রপ্তানি করতে পারছে। ফলে দেশে সেরা ২০ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির মধ্যে প্রায় সব স্থানীয় কোম্পানি উঠে এসেছে। অথচ, কৃষি খাতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও পিছিয়ে পড়ছে শুধুমাত্র বৈষম্যমূলক বিধির কারণে। যার একতরফা সুযোগ নিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। এজন্য দেশীয় উদ্যোক্তারা কৃষি শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে।
সভায় বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন গঠনের লক্ষ্যে সর্বসম্মতিক্রমে ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার আই/ই লিমিটেডের এমডি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান সিআইপিকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে রহমান পেস্টিসাইডস অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানির প্রোপাইটার মো. আবু জাহাঙ্গীর খানকে। এ ছাড়াও সদস্য হিসেবে রয়েছেন, বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রোপাইটার এম এ মান্নান, রাজিব এগ্রো কেমিক্যালসের এমডি কাজী ফারুক হোসেন প্রমুখ।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status