× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মুরাদে জিম্মি ছিল সরিষাবাড়ী /এখন মুখ খুলছেন সবাই

প্রথম পাতা

পিয়াস সরকার, সরিষাবাড়ী (জামালপুর) থেকে
৯ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার

প্রতিমন্ত্রী এবং দলীয় পদ হারানোর পর নিজ নির্বাচনী এলাকায়ও চরম বেকায়দায় ডা. মুরাদ হাসান। তার কাছে জিম্মি হয়ে থাকা নেতাকর্মীরাই এখন তার সব কুকর্মের ফিরিস্তি দিচ্ছেন। তারা বলছেন, মুরাদ সরিষাবাড়ীতে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকটা জিম্মি করে রেখেছিলেন। তার বিরুদ্ধে কথা বলা তো দূরের কথা অকারণেই নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাদের। এখন এই নেতাকর্মীরাই সোচ্চার মুরাদের নানা অপকর্ম নিয়ে। পদ হারানোয় তারা খুশি।

নেতাকর্মীদের ভাষ্য, ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছিল মুরাদ। বাবা মতিউর রহমান তালুকদারের পরিচয় খাটিয়ে এলাকায় নানা অপরাধ করতেন।
মেডিকেলে ভর্তির পর প্রথমে ছাত্রদলে নাম লেখান। পরে ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ২০০১ সালে নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন আবুল হোসেন। মুরাদ ছিলেন তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। এরপর দীর্ঘদিন ছিলেন এলাকা ছাড়া। কিন্তু হঠাৎ এলাকায় আসেন ২০০৭ সালে। সংসদ নির্বাচনে পেয়ে যান দলীয় মনোনয়ন। এরপর থেকে তিনি নিজের রাজত্ব গড়ে তুলেন। নিজের মতো সব চালাতে থাকেন।
স্থানীয় যুবলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, আমি মুরাদের বাবার সঙ্গে রাজনীতি করতাম। মতিউর ভাই মুরাদকে গালমন্দ করতেন। তিনি বলতেন, আমার রক্তে আওয়ামী লীগ। আমার সন্তান যদি ছাত্রদল করে আমার কেমন লাগে কও? ময়মনসিংহে যখন ভর্তি হয় তখন থেকে সে মাদকে আসক্ত বলে আমরা শুনেছি।

এলাকায় সংসদ সদস্য হিসেবে নানা অপকর্মের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কামারাবাদ এলাকায় এক ভুক্তভোগী মো. খোরশেদ অভিযোগ করেন তারা পৈতৃক ৫০ শতাংশ জমি অর্থের বিনিময়ে পাইয়ে দেন লুৎফর রহমানকে। তিনি বলেন, এই জমির মালিকানা নিয়ে পারিবারিক ঝামেলা চলছে। এই সুযোগে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়ে জায়গাটা দিয়ে দেয়। আমাকে দুপুরে থানায় নিয়ে যায়। আটকিয়ে রাখা হয়। মামলা দেয়া হয়। আমার এই জায়গায় গোডাউন ছিল, এখন ব্যবসাও বন্ধ।

দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি, নির্যাতনের অভিযোগ আছে ডা. মুরাদের বিরুদ্ধে। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন হোসেন শিবলু মোবাইলে ছবি দেখিয়ে বলেন, আমাকে মুরাদের ক্যাডার বাহিনী অত্যাচার করে। আমার সাধারণ সম্পাদককে গুলি করে এক চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। ২০১৯ সালে আমাদের নির্যাতন করে। তিনি বলেন, অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে পারে না। একটা ক্যাডার বাহিনী গঠন করছে যা দিয়ে নির্যাতন চালায়। থানা শ্রমিক লীগের জয়েন্ট সেক্রেটারিকে ২ বছর আগে মারে। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে। এ ছাড়াও তিনি নাসিম নামে একজন সাংবাদিককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসার অভিযোগ করেন। ছাত্রলীগ সভাপতি শিবলু বলেন, আমার নামেও মামলা হয়েছিল। মারামারির মামলা করে। মামলায় আমাকে এক নম্বর ও আমার বাবাকে ৩ নম্বর আসামি করে। ২১ জনের নামে মামলা করে। আমার বাবা ব্রংকাইটিসের রোগী। আমার বাবাকে অ্যারেস্ট করে থানায় না রেখে চালান করে। আমাকেসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। আর কি বলবো ভাই, কলেজের ছাত্র সংসদের মনোনয়ন গেছে এমপির ডিও লেটারে। রাশেদ মোশারফ নামে এক ছাত্রনেতাকে বেদম পেটায়। ভিপি নাজমুল হুদা জিএস রাজন এজিএস সুমন তাকে বেদম পেটায়। অসংখ্য ছাত্রনেতার ওপর হামলা হয়।

উপজেলা সদরে একজনকে মুরাদ হাসানের একটি ব্যানার সরাতে দেখা যায়। তিনি মুরাদের সমর্থক দাবি করে বলেন, মুরাদ ভালো মানুষ। অনেক কাজ করছে এলাকায়। কিন্তু উল্টাপাল্টা কথার কারণে এই শাস্তি পাইলো। তিনি বলেন, এলাকায় প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, হিজড়া ভাতাসহ নানা ভাতা পাইছে। তার এই বক্তব্যের জবাব দেন পাশে থাকা একজন। তিনি বলেন, এই ভাতার জন্য কতো টাকা করে নিয়েছে জানেন। একটা কার্ড করতে দুই থেকে ছয় হাজার টাকা করে নিছে। এই কিছুদিন আগে একটা রাস্তা ১৩ লাখ টাকা দিয়ে করলো। সেদিন রাতে বৃষ্টিতে সব উঠে গেল। এই হলো কাজ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ বলেন, এখন এলাকার মানুষ আনন্দ প্রকাশ করছে। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল মুরাদ। সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছে। তার ইঙ্গিতে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। পূর্বে প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ ছিল না। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন। আপনারা যেটুকু কথায় অশ্লীলতা দেখেছেন তাতেও শালীনতা ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়। আমাদের নেতাকর্মীদের যেসব ভাষায় গালি দিতেন তিনি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি। কারণ প্রতিমন্ত্রীর প্রটোকল, গানম্যান সঙ্গে থাকতো। তিনি নেশাগ্রস্ত হয়ে পার্টি অফিসে আসতেন। নেতাকর্মীদের গালি-গালাজ করতেন। কারও কথা শুনতেন না।

জেলা বিএনপি’র সহ দপ্তর সম্পাদক জহুরুল ইসলাম পিন্টু বলেন, সরিষাবাড়ী বিএনপি নেতাকর্মীরাও মুরাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের সরিষাবাড়ী পার্টি অফিসে নিহত ১০ জন নেতাকর্মীর ছবি আছে। এরমধ্যে ৯ জনই মুরাদের লোকজনের হাতে খুন হয়েছেন। অসংখ্য নেতাকর্মী শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মামলার শিকার হয়েছেন।

মুরাদ হাসানের পদ হারানোর পর এলাকার সাধারণ মানুষ খুশি। বুধবার সরজমিন সরিষাবাড়ী এলাকা ঘুরে মেলে নানা তথ্য। টার্মিনাল এলাকায় মতিন মিয়ার চায়ের দোকান। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের খেলা দেখছেন সবাই। আর আলোচনায় মুরাদ। চা দোকানি জানান, এলাকায় অনেক মানুষ তাকে অপছন্দ করতো। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করাতে সকলের ঘৃণার পাত্র হয়েছেন তিনি। সাদেক হোসেন বলেন, প্রতিমন্ত্রীকে দিয়ে আমাদের এলাকার কোনো লাভ হয়নি। তার মাধ্যমে এলাকায় মাদক এসেছে, অশান্তি এসেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ ডা. মুরাদের অপকর্মের সহযোগী ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন মুকুল। এলাকায় তিনি ডা. মুরাদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। মুকুলের এলাকায় ২০-৩০ জনের একটা সন্ত্রাসী দল আছে। যারা প্রত্যেকেই এলাকায় ত্রাস। মুকুলের কথায় তারা ‘যেকোন’ কাজ করতে পারে। মুরাদ এলাকায় এলে তারা প্রটোকল দেয়। প্রতিমন্ত্রী ও দলীয় পদ হারানোর পর গাঢাকা দিয়েছেন এই মুকুল ও তার সহযোগীরা। উপজেলা সদরে তার ব্যক্তিগত অফিসটিও আর খোলা হচ্ছে না। গত দুইদিন ধরে তার ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, নিজ নির্বাচনী এলাকায় মুরাদ একক আধিপত্য বিস্তার করলেও জেলার রাজনীতিতে তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। নিজের আচরণের কারণে জেলা নেতারা তাকে খুব একটা সুযোগ দিতেন না। এ কারণে সরিষাবাড়ী নিয়েই তিনি বেশি ব্যস্ত থাকতেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, নির্বাচনী এলাকায় নৌকার ভোটার বেশি। ডা. মুরাদ নিজের কোনো যোগ্যতায় এমপি হন। তার বাবার অবস্থান এবং দলীয় ভোটারদের কারণে তিনি এমপি হলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক নেই।

ওদিকে মুরাদ হাসানকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে মঙ্গলবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বলেন, দলীয় কার্যালয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় মুরাদকে উপজেলা কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠানো হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
পাঠকের মতামত
**মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।
Shofiqul Bhuiyan
৯ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৭:২৮

নিউজটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। এ কথা গুলো আগে কেউ বলার সাহস করতো না, কারণ ‘মুকুল বাহিনী’

Kazi
৮ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ১১:৪০

আমার এক সহকর্মী কানাডিয়ান নাগরিক, কিন্তু নেদারল্যান্ডসের বংশোদ্ভূত, ফিলিপাইন ভ্রমণের পর মন্তব্য করেছিল - ঐ দেশে আমি দেখেছি spoiled son of rich people. কথাটা ধ্রুব সত্য । এশীয় ধনীর দুলাল বাপের রোজগার খায় তাই বখে যায় । পশ্চিমা দেশগুলোতে সন্তান বাপের রোজগার ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত খেতে পায়। ১৮ বছর হলেই নিজের আয় দিয়ে চলতে হয় ।

nasir uddin
৯ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:১০

Everybody is active now. Is this their general character?

হেদায়েত উল্লাহ।
৮ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ৬:০১

সবার সাথে মিডিয়াও মুখ খুলেছে এখন।

Borno bidyan
৮ ডিসেম্বর ২০২১, বুধবার, ৫:০১

আওয়ামীলীগে এমন মুরাদের অভাব নেই! প্রায় প্রতিটি জেলায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব দিচ্ছে! তারা বিরোধী মতকে তো দমোন পীড়ন চালায়ই, এমনকি নিজ দলের মধ্যে গড়ে ওঠা আদর্শিক নুতন ও পুরাতন নেতাদেরকে অপমান অপদস্ত ও অত্যাচার করে থাকে! ক্ষমতার দাপটে আওয়ামীলীগ অন্ধ কিন্তু দেয়ালে কান পাতলে শোনা যায়, দলীয়ভাবে আওয়ামীলীগ এখন অন্তঃসার শূন্য একটা দল! যার নেতৃত্বে ডা. মুরাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর নেতারও আছে! দলীয় ও ব্যক্তিগত রোষানলের ভয়ে সবাই চুপ থাকলেও থেমে নেই ঘুনে খেয়ে ফেলা সব শক্তি!

Shobuj Chowdhury
৯ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১২:৪৪

Murad is the snapshot and a perfect representation of people who is elected without votes

অন্যান্য খবর