নববর্ষ উদযাপনের নামে এক শ্রেণির মানুষ যা করেছে তা এক কথায় বর্বরতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না। আরে আমাদের তো একটা স্বতন্ত্র ইতিহাস আছে। স্বতন্ত্র ঐতিহ্য আছে। ভাষার ঐতিহ্য, সংস্কৃতির ঐতিহ্য এবং ইতিহাস আমাদের হাজার বছরের। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টার পরে যা করা হয়েছে তা অপসংস্কৃতি। বিজাতীয় সাংস্কৃতিক। এটাকে আনন্দ বলা যায় না। আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গেও এসব যায় না। আমার মুসলমান। অনেকে রাত জেগে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে, ইবাদত বন্দেগি করে। সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ঘুমের ঘোরে আচমকা বুক ধড়ফড় করে ওঠেছে। মাথা ঘুরে ওঠেছে। যে আনন্দ আরেক জনের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তা কি সভ্য সমাজে চলে? কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে কি সম্ভব আরেক জনের জীবনের শান্তি নষ্ট করা? অথচ সে রাতে তা-ই করা হয়েছে। ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন তারকা হোটেলে। তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে বয়সীরাও মদ খেয়ে মাতাল হয়েছে, ঢলাঢলি করেছে। আতশবাজি ফোটানো হয়েছে মুহূর্মুহু। ফানুস পোড়ানো হয়েছে বেশুমার। খবরে প্রকাশ ঢাকা সহ সারা দেশে অন্তত কুড়ি জায়গায় ফানুস পোড়ানো থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘরবাড়ি দোকানপাটে আগুন ধরেছে। অনেকের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাস্তায় বের হলে, মার্কেটে গেলে ভিক্ষুকের হাতপাতার করুণ দৃশ্য দেখে মন ভারী হয়ে ওঠে। ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে অপচয়, অপব্যয় ও অপবিত্রতার সম্পর্ক নিবিড়। বাংলা ভাষা আমাদের গৌরবের। বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হওয়ার ইতিহাস আছে। কিন্তু, বিজাতীয় একটা ভাষার বর্ষ উদযাপনের নামে জীবন ও সম্পদ হানী কখনো মেনে নেয়া যায় না। শিশু উমায়েরের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের আইনের চোখে তারা অপরাধী কিনা তা সনাক্ত হওয়া উচিত ভবিষ্যতে এমন মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার তাগিদে। উমায়েরের মতো হার্টের রোগী পাড়ায় পাড়ায় আছে। উচ্চ রক্তচাপের রোগী আছে। এসব কি কর্তৃপক্ষের অজানা নাকি উদাসীনতা! কাজেই অপসংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আনন্দের নামে অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুদের জন্য বসবাস নিরাপদ করতে হবে এবং বয়সীদের জন্যও। এপ্রসঙ্গে সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতাটি মনে পড়ছে। 'যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুমঃ/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত উত্তোলিত,/ উদ্ভাসিত কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।/ সে ভাষা বোঝে না কেউ,/ কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।/ আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।/ পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের/ পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর/ অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।/ এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;/ জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে / চলে যেতে হবে আমাদের। চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।/ অবশেষে সব কাজ সেরে/ আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আশীর্বাদ,/ তারপর হব ইতিহাস।'
পটকা ফুটানো, পাড়া মহল্লায় কারণে অকারণে উচ্চ শব্দে গান বাজানো, আবাসিক এলাকায় সভা সমিতিতে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো - এইগুলা শব্দ সন্ত্রাস, বাংগালের বদ অভ্যাস, আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এইগুলা বন্ধ করতে হবে।
আব্দুল করিম হুসাইন
৪ জানুয়ারি ২০২২, মঙ্গলবার, ৭:৪৩এই পটকা-বাজি সরকারি ভাবে বন্ধ করা হউক