ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিনটা কাটে কিভাবে? সারাদিনের রুটিন তাঁর কি? সম্প্রতি একটি বিদেশী ম্যাগাজিন উঁকি দিয়েছিলো তাঁর অন্দরমহলে। তাদের মাধ্যমে কিছুটা আর ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে অনেকটাই উঠে এসেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জীবন যাপনের ধরন যা দেশের অন্য প্রধানমন্ত্রীদের থেকে একদম আলাদা। মোদির দিন শুরু হয় ভোর ৪টায়। ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে তিনি তাঁর মোবাইলে দেখে নেন প্রয়োজনীয় টুইটগুলি। এরপর প্রায় ৪৫ মিনিট সূর্যপ্রণাম, প্রাণায়াম এবং যোগা ব্যায়াম করেন তিনি।
তারপর সাত নম্বর রেসকোর্স রোডের বাংলোর লনে হেঁটে বেড়ানোর সময়ই তিনি তাঁর পোষ্য কুকুর, ময়ূর, রাজহাঁস এবং পায়রাদের দানাপানি দেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় মোদির একটি লাব্রাদার ছিল তাকে তিনি নিয়মিত বিস্কুট খাওয়াতেন। মোদির পশু-পাখিপ্রীতি সর্বজনবিদিত।
লনে বেড়ানোর শেষে তিনি লিভিং রুমে বসে খবরের কাগজের পাতা উল্টান। একাধিক ইংরেজি কাগজ পড়েন তিনি। পড়েন গুজরাটি কাগজ, সঙ্গে থাকে বড় কাপের এক কাপ কালো চা।
এই সময়ই সরকারি নিউজ ক্লিপিংগুলোও তিনি পড়ে নেন। এরপর স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে মোদি সৌখিন। তবে, বেশি খান না। স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর খাবার খান। তাঁর ব্রেকফাস্ট টেবিলে থাকে গুজরাটি ও দক্ষিণ ভারতীয় প্রাতরাশ। নিজস্ব পাচক বদ্রি মিনা নিজের হাতে বানান মোদির খানা। তাই মোদির বিদেশ সফরেও অধিকাংশ সময়ে বদ্রি মিনা সঙ্গী থাকেন। ব্রেকফাস্টে মোদির জন্য মিনা বানান- কাধি, উপমা কিংবা খাকরা।
নিরামিষভোজি মোদি ঠিক সকাল ন'টায় সাউথ ব্লকে নিজের অফিসে পৌঁছে যান। মোদি দিল্লি থাকলে সোম থেকে শনি নিয়মিত অফিস করেন। অন্য প্রধানমন্ত্রীদের মতো বাড়ির অফিস ব্যবহার করেন না। অটল বিহারি বাজপেয়ী তো সাউথ ব্লকে সপ্তাহে এক-দু'দিন আসতেন। মোদি নিয়মিত আসেন। অফিসারদের সঙ্গে মিটিং করেন, যাবতীয় খবর নেন, নোট দেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে মোদি দুটি পুরস্কারও চালু করেছেন। এমপ্লয়ি অফ দ্য মান্থ এবং এমপ্লয়ি অব দ্য ইয়ার। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কাজ করার পর লাঞ্চটাইম।
আমজনতার সঙ্গে বসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাঞ্চ সারেন পার্লামেন্টের ক্যান্টিনে বসে। তাঁর লাঞ্চের মেনু- শাক, সালাদ, ডাল, কারি এবং দুটি চাপাটি। সঙ্গে এক বাটি দই খেতে তিনি কখনও ভুলেন না। এরপর আবার কাজে মেতে যান মোদি। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কাজ। বাড়ি ফিরে এক কাপ চা আর দুটি বিস্কুট। এরপর টেলিভিশনের সামনে বসে পড়েন। নিউজ চ্যানেল দেখা তাঁর হবি। টেলিভিশনের টকশো দেখেন চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে। তারপর রাতের ডিনার। মোদির প্রিয় খিচুড়ি তাতে থাকেই। কখনও থাকে খাট্টা ধোকলা, বেসন খাভরি, উধিও, আমন্ড পিস্তার শিখর খন্ড।
এগুলি মোদির সবচেয়ে প্রিয় আইটেম। ডিনারের পর ফের টিভি দেখা। তারপর ঘুমের দেশে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি, মোদি মন্ত্রিসভার একদা সদস্য বেঙ্কইয়া নাইডু বলেছিলেন, মোদি নিজে ঘুমান না, অন্য মন্ত্রীদেরও ঘুমাতে দেন না। ভারত যে অতন্দ্র তা বোধহয় এর থেকেই বোঝা যায়।