সন্ধ্যার অন্ধকার তখন সবে নামছে। কলকাতার বাবুঘাটে মকর সংক্রান্তির স্নান করতে গঙ্গাসাগর অভিমুখী সাধু সন্ন্যাসীদের ক্যাম্পে ভিড় বাড়ছে। অধিকাংশর মুখে মাস্ক নেই। অনেকে ধুনি জ্বালিয়ে বসে আছে। বড় বড় উনুনে রুটি সেঁকা হচ্ছে। বড় কড়াইতে রান্না হচ্ছে লাবড়া। বাইক বাবা সম্পর্কে আগ্রহ ছিল। বাইকে চেপে এই সাধু গঙ্গাসাগরে ঘোরেন প্রতিবার।
এবারও এসেছেন। সঙ্গে এসেছে পুরোনো মলিন বুলেট বাইকটিও।
সন্ধ্যার অন্ধকারে আগুনের কুন্ডলি তৈরি করে ছিলিমের মৌতাতে বুঁদ বাইক বাবা মাস্কবিহীন মুখ থেকে গলগল করে ধোঁয়া বের করে বললেন- করোনা-উরোনা সাধু বাবা লোগ কে নেহি ছুঁতে। উসি লিয়ে ডর কিউ? ২৭ বছর ধরে গঙ্গাসাগর মেলায় আসছেন বাইক বাবা। আপাতত বাবুঘাটের ট্রানজিট ক্যাম্পে। কদিনের মধ্যেই আট নম্বর লট এর থেকে ফেরি সার্ভিস ধরবেন গঙ্গাসাগর যাওয়ার জন্য। সোমবার রাতে বাবুঘাটের ট্রানজিট ক্যাম্পে গিয়ে দেখলাম এই ঘোর করোনার মধ্যে মাস্কবিহীন, সামাজিক দূরত্ববিহীন এক ঝাঁক মানুষকে। লঙ্গরখানার সামনে ভিড় করে রুটি লাবড়া খাচ্ছেন গা ঘেঁসাঘেঁসি করে সব বসে।
কোথায় করোনা বিধি? ৩১ জন সাধু এই বাবুঘাটে পজিটিভ এসেছেন, শিয়ালদহতে ছয় জন পজিটিভ। কোথায় সচেতনতা? এদিকে ডক্টরস ফোরাম ফের মামলা করেছে কলকাতা হাইকোর্টে যে গঙ্গাসাগরে মকর সংক্রান্তির জমায়েত সুপার স্প্রে ডার হতে পারে। আরও পাঁচটি জন্যস্বার্থের মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার হাইকোর্ট তিন সদস্যের কমিটি গড়ে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে করোনা বিধিনিষেধ মানার ব্যাপারে দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছে। কমিটিতে কোনও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ না থাকাতেও মামলা হয়েছে। কিন্তু, আদালতের মামলা টামলা নিয়ে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই বাইক বাবা, একাহারি বাবা, ইলেকট্রিক বাবা কিংবা ধুনুচি বাবাদের। ডাল রুটি খেয়ে তাঁরা গঙ্গাসাগরে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত।