× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অব্যবস্থাপনা ভোগান্তি চরমে

শেষের পাতা

পিয়াস সরকার, বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) থেকে ফিরে
১৭ জানুয়ারি ২০২২, সোমবার

কিডনি জটিলতায় ভুগছেন রিনা আক্তার। হাঁটতে পারেন না বেশিক্ষণ। স্বল্প পরিশ্রম করলে হাঁপিয়ে যান তিনি। এরপরও এসেছেন ভোট দিতে। সকাল সাড়ে ৮টায় লাইনে দাঁড়ান। এরপর ভোট প্রদান কক্ষে পৌঁছান ১০টায়। সেখানে জানিয়ে দেয়া হয়, তার ভোট অন্য কক্ষে। এতটাই বিরক্ত হন যে বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ।
এখন আবার অন্য জায়গায় যাবো? ভোটই দিতাম না।

রোববার হয়ে গেল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে শহরজুড়ে ভোটের আমেজ। পোস্টার-ব্যানারের যেন রাজ্য। শীতের হিমেল হাওয়া ও নির্বাচন মিলেমিশে একাকার। নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা যায়, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট সবাই। ভীতিমুক্ত, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেছেন ভোটাররা। তবে ভোটের ব্যবস্থাপনা নিয়ে দিনভর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোটাররা। ভোটারদের মোকাবিলা করতে হয়েছে ব্যাপক ভোগান্তি। অনেকেই ভোট না দিয়েই চলে গেছেন।

ভোট শুরু হয় সকাল ৮টায়। শুরুতে বন্দরের নবীগঞ্জ সিনিয়র কামিল মাদ্রাসায় দেখা যায়, নেই ভোটারদের উপস্থিতি। বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এই কেন্দ্রে প্রথম ৩০ মিনিটে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৬ জন। ভোট দিতে আসা সালেকিন আহমেদ বলেন, পরিবেশ কেমন হয় পরে এই নিয়ে তো একটা চিন্তা আছেই। তাই আমার স্ত্রীসহ ভোট দিতে আসলাম।

এবারই প্রথম ভোট দেন শায়লা চৌধুরী তয়া। তিনি বলেন, এর আগে একবার ভোটার হয়েছিলাম কিন্তু ভোট দেয়া হয়নি। এবার প্রথম ভোট দিলাম, খুবই ভালো লাগছে। আমি যে বড় হয়েছি তা প্রথম অনুভব করলাম।

সকাল ১০টার দিকে সরকারি কদম রসুল কলেজে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের লাইন। এই লাইন সময় যত গিয়েছে তত বেড়েছে। সকাল ১১টার দিকে নারীদের লাইনে আনুমানিক ৭০-৮০ ও পুরুষদের লাইনে ১৫০-১৮০ জন ভোটার লাইনে অপেক্ষা করছিলেন। তবে কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে পরিবেশ ভালো থাকলেও ভোগান্তিতে ছিলেন ভোটাররা। ভোটাররা তাদের সিরিয়াল নম্বর নিয়ে আসলেও কেন্দ্রে গিয়ে তা মিলছে না। এ ছাড়াও অনেকেই নির্দেশনা অনুযায়ী কক্ষে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি।
এই কেন্দ্র থেকে ভোট না দিয়েই চলে যান সুলতানা আক্তার। তিনি বলেন, আমি রক্ত শূন্যতায় ভুগছি। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এখন বলছে এখানে ভোট না। উপর তলায় যেতে হবে। আমি অসুস্থ মানুষ, তারা একবারে বলতে পারে না।

বন্দরের সরকারি কদম রসুল কলেজে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। ৮০ বছর বয়স্ক রানী বালা এসেছেন ভোট দিতে। হাঁটতে পারেন না ঠিকমতো। লাইনে না দাঁড়িয়ে তাকে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করেন দায়িত্বরতরা। তার ছেলের বউ বলেন, আম্মা অসুস্থ। কইলাম ভোট দেয়া লাগবো না কিন্তু মায়ে শুনে না। তাই ভোট দিতে নিয়া আইলাম। আম্মায় ভোট দিবোই।

ভোট দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে ফিরছিলেন রানী বালা। তিনি বলেন, আর বাঁচুম কয়দিন, ভোটটা দিয়ায় মরি। আমি হাঁটতে পারি না বাজান, তাও আইচি। ভোট দেওন আমার দায়িত্ব। ভোটটা দিয়া ভালোই লাগতাছে। ইভিএমে ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা- এর উত্তরে তিনি বলেন, প্রথমে তো বুঝবারি পারি নাই। দুই তিনবার হাতের ছাপ মেলে নাই। মেলার পরে হেরা বুঝায় দিলো, তহন দিছি।
সেখান থেকে যাওয়া একরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই ভোটকেন্দ্রে যেতেই ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। তখন ঘড়িতে সময় প্রায় সাড়ে ১১টা। লাইনে দাঁড়িয়ে সালমা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়াইছি। তখন আমার সামনে ছিল ৭ জন। এখনো আমার সামনে ৩ জন। কয়েকজন অসুস্থ মানুষ খালি ঢুকছে। তাইলে এত সময় তারা করতেছে কি? তিনি আরও বলেন, আমাদের কি আর কোনো কাম কাজ নাই? কতোক্ষণ দাঁড়ায় থাকবো? মেশিন নষ্ট হইলে পালটায় দিক।

আইভি খাতুন নামে এক ভোটার বলেন, আটটা-সাড়ে আটটা থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারছি না। অন্য লাইনের  ভোটাররা ভোট দিয়া চলে যাচ্ছে, আমাদের লাইন আগাই না। আমাদের কি কাজ কাম নাই?

ধীরগতির কারণ জানতে চাইলে প্রিজাইডিং অফিসার মো. ফারুকুল্লাহ বলেন, না মেশিন নষ্ট না। অনেক মহিলার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না। এই কারণেই সময় লাগছে।

বন্দর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিত্রটা পুরোই ভিন্ন। নিচ তলায় নেই কোনো ভোট কক্ষ। সবাই যাচ্ছেন দ্বিতীয় তলায়। সেখানেও বেশ ভিড়। পাশেই বন্দর শিশুবাগ বিদ্যালয়। সেখানেও স্বাভাবিক অবস্থায় চলছে ভোট। ভোগান্তিটাও অনেক কম। আমিরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও চলছিলো তুলনামূলক ভোগান্তিবিহীন ভোট।

তবে চিত্র পাল্টে যায় দক্ষিণ লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে। এখানে কেন্দ্রের সামনে দীর্ঘ লাইন। ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে ভোটাররা অপেক্ষা করছেন ভোট প্রদানের। প্রশাসনের লোকেরা হিমশিম খাচ্ছেন সামলাতে। ভোটাররা বলছেন, এক ঘণ্টায় দুটা ভোটও কাস্ট হয় না। আমরা কতোক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবো? সুমন নামে এক ভোটার বলেন, ৩ ঘণ্টা ধইরা দাঁড়ায় আছি। শেষ ৪০ মিনিটে আমার সামনে থেকে মাত্র ৩ জন গেছে, তাও একজন এখনো ভোট দিতে পারেন নাই।

করোনার সময়ে একজনের শরীর ঘেঁষে আরেকজন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। শীতকালেও গরমে কাহিল তারা। একজনের শরীরের সঙ্গে আরেকজনের শরীর লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে রীতিমতো ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত তারা।

মহিলাদের লাইনেও একই অবস্থা। ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে আছেন ভোট দেয়ার জন্য। তারা বলছেন, ৩ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে পারেননি। ভোটকক্ষে গিয়ে দেখা যায়, আলতাফ হোসেন নামে এক ভোটার ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। প্রায় ৮-১০ মিনিট পরও অন্যজনকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।

উত্তর লক্ষণখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই চিত্র। এখানে ঠাসাঠাসি করে ভোট প্রদানের অপেক্ষা করছেন নাগরিকরা। দুই কেন্দ্র থেকেই জানানো হয়, ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ না করা ও ইভিএমে অভ্যস্ত না হওয়ায় এই সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

প্রতিটি কেন্দ্রের ভেতরে, বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত অবস্থান চোখে পড়ে। কেন্দ্রের সামনে অহেতুক ঘোরাঘুরি, জটলা পাকানো মুক্ত রেখেছেন। পুরো শহরজুড়ে সার্বক্ষণিক পাহারা দিয়েছেন তারা। প্রতিটি বুথে মিলেছে হেভিওয়েট প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাপমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর