× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চোখের জলে বিদায়

বাংলারজমিন

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৯ জানুয়ারি ২০২২, বুধবার

তার বিদায়ে চোখ ভিজেছে সবার। অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি তিনি নিজেও। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে তার বাংলোতে এমন এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চোখের জলে বিদায় জানান তাকে সহকর্মীরা ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সোয়া ৩ বছর কার্যকালে জেলার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। গণমানুষের প্রশাসক হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। নানা কাজের জন্য প্রশংসিত হন। করোনা মোকাবিলায় ঝুঁকি নিয়েই ছুটে বেড়িয়েছেন বাইরে।
আক্রান্ত হন একাধিকবার। সবশেষ ইউপি নির্বাচনে দাঙ্গা-হাঙ্গামারত জেলার চিরায়িত ঐতিহ্য মুছে দিতে সক্ষম হন। জেলার একশ’ ইউনিয়নের মধ্যে ৭৯ ইউনিয়নের নির্বাচন হয় একবারে শান্তিপূর্ণ।
২০১৮ সালের ৯ই অক্টোরব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন হায়াত-উদ-দৌলা খান। এরপর সর্বোচ্চ মেয়াদে এই জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেন। বদলি আদেশের পর গত ১৩ই জানুয়ারি নতুন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলমের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যোগদান করার পরই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন হায়াত-উদ-দৌলা খান। যার অন্যতম সরাইল উপজেলার বিটঘর বধ্যভূমি। তার উদ্যোগে সেখানে শহীদদের নামফলক ও স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে। ’৭১-এর ৩০শে অক্টোবর দুপুরে এ গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় বিটঘর গ্রামের পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামে পাকিস্তানি এক সেনাসদস্য গ্রামবাসীর বল্লমের আঘাতে নিহত হন। আর গ্রামবাসীর পিটুনিতে গুরুতর আহত হন উপজেলা সদরের মনু রাজাকার। এরপর ৩১শে অক্টোবর রাতে গ্রামের খালপাড়ের নির্জন এক জায়গায় ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ব্রাশফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বর্বর পাকবাহিনী। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও অবহেলিত ছিল এই বধ্যভূমি। হায়াত-উদ-দৌলা খান সরজমিনে সেখানে যান এবং এটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। তেমনিভাবে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর, পৈরতলার বৈধ্যভূমি, ওয়াপদার টর্সারসেল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সেন্দ গ্রামে ১৮ একর জায়গা নিয়ে ডিসি পার্ক প্রতিষ্ঠা তার অনন্য উদ্যোগ। এছাড়া শহরের দক্ষিণ মোড়াইলে পুরাতন ভূমি অফিসের স্থানে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জাদুঘর।
গেল বছর হেফাজতের তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সময়ে সচল করার উদ্যোগ নেন হায়াত-উদ-দৌলা খান। এছাড়া করোনা মহামারি মোকাবিলা, টিকা ব্যবস্থাপনা, ভূমি ও বাস্তুহারা মানুষদের ঘরের অধিকারী করার কাজেও সাফল্য দেখিয়েছেন। মুজিব বর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর দেয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত গৃহনির্মাণ কার্যক্রম এর আওতায় জেলায় ৬০৯৪ জনের তালিকা করার পর গত বছর ২০৩২ জনকে গৃহ হস্তান্তর করা হয়। আরও ২০৫৯ জনকে ঘর দেয়ার কার্যক্রমও শেষের পথে। ৬ হাজারের মধ্যে মোটামুটি একবছরে ৪০৯১ জনকে গৃহের অধিকারী করতে সক্ষম হয় তার নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন। ২০২০ সালের পর ২০২১ সালে মহামারি মোকাবিলায় হায়াত-উদ-দৌলা খানের নেতৃত্বে কাজ করে জেলা প্রশাসন। করোনাকালে দেড় লাখ লোকের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়। ডেল্টা ভ্যারিয়েণ্ট আতঙ্কে গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমানা বন্ধ হলে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কারণে ভারতে গিয়ে আটকে পড়া ৪ হাজার ৪২৯ জন বাংলাদেশি নাগরিক আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরেন। তাদের প্রত্যেকের ২ সপ্তাহ করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেণ্টিন নিশ্চিত করা, কোভিড টেস্ট করানো, আক্রান্ত হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং কোয়ারেন্টিন শেষে তাদেরকে স্ব-স্ব ঠিকানায় পাঠানোর মতো বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয় হায়াত-উদ-দৌলা খানের নেতৃত্বে। জেলার ইউপি নির্বাচন প্রসঙ্গে হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেনÑ এটা করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের। সারা বাংলাদেশে যে নির্বাচনী সহিংসতা সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নামটা কোথাও নেই। সবাই এতে আশ্চর্য হয়েছে। সবাই মনে করেছিল এখানে আরও ভালো মতো হবে। সরাইল, নাসিরনগর, নবীনগর, বিজয়নগর, কোথাও না কোথাও মারামারি হবেই। এমন ধারনা ছিল সবার। ২০২১ সালের মার্চ মাসে হেফাজতের ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত অফিস, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়ার কৃতিত্বও রয়েছে তার। তিনি বলেন, ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়ায় অনেকেই মনে করেছিল কবে কি হয় না হয়। এটি কিন্তু এখন ফাংশনাল।
তিতাস আবৃত্তি সংগঠনের পরিচালক মনির হোসেন বলেন, করোনা সংকটের মধ্যেও তিনি শিল্প-সংস্কৃতি এবং ক্রীড়াঙ্গনকে সক্রিয় রেখেছেন। তিনি গণমানুষের কাছাকাছি ছিলেন। তার বিদায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আবেগের সৃষ্টি করেছে। জেলা জামে মসজিদ কমটির সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বলেন, তিনি যেকোনো কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে করেছেন। বিশিষ্ট নারী নেত্রী এডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন, তিনি ভিন্ন মাত্রার একজন জেলা প্রশাসক ছিলেন। সত্যিকার অর্থেই তার দরজা ছিল সবার জন্য খোলা। তার কর্মকা- সকল মহলে প্রশংসনীয় হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি বলেন, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করেই তিনি কাজ করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, হায়াত-উদ-দৌলা খান যোগ্য এবং অভিজ্ঞ জেলা প্রশাসক ছিলেন। সকলের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করেছেন তিনি। তার সময়ে কোনো প্রবেলেম হয়নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
পাঠকের মতামত
**মন্তব্য সমূহ পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।
Team Nurul Choudhury
২০ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৪:২৫

What a great leader. I am sure he will be missed for ever.

অন্যান্য খবর