কনকনে শীতের সকালে কুয়াশাভেজা চাদর গায়ে পেঁচিয়ে গোল গাছের রস সংগ্রহে নামেন গাছি মো. রহমতুল্লাহ। তিনি প্রায় ৭০০ গোল গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। এ কাজে তার ছেলে ও ছেলের বউ সাহায্য করেন। শীতের মৌসুমের কয়েক মাস গোল গাছের রস ও গুড় বিক্রি করে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করে এই পরিবারটি।
বরগুনার তালতলী উপজেলার করইবাড়ীয়া ইউনিয়নের বেহেলা ও গেণ্ডামারা গ্রামে গেলে দেখা মেলে সারি সারি গোল গাছের। গোলের রস ও গুড় বিক্রি করে সংসার চলে এখানকার অধিকাংশ পরিবারের।
তালতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে গোল গাছের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। সবচেয়ে বেশি গুড় আসে বেহালা ও গেণ্ডামারা গ্রাম থেকে। এক মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার টন গুড় উৎপাদিত হয়। গেণ্ডামারা এলাকার গাছি মো. রহমতুল্লাহ বলেন, প্রায় ৭০০ গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করেন।
পরে সেগুলো বাড়িতে এনে আগুনের তাপ দিয়ে গুড় তৈরি করেন। এ কাজে তাকে তার স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউ সাহায্য করেন। প্রতি বছর রস ও গুড় বিক্রি করে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করেন। সরজমিনে বেহালা ও গেণ্ডামারা ঘুরে ও গাছির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের প্রথম দিকে জানুয়ারি মাস থেকে রস সংগ্রহ শুরু চলে জুলাই পর্যন্ত। এই ৫ মাস গোল গাছের রস ও গুড় বিক্রি করে সারা বছর সংসার চলে গাছিদের। গাছি সুজন সমাদ্দার বলেন, গোলের রসের চাহিদা কম থাকলেও এখন চাহিদা বেড়েছে। দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের কলকাতায় থাকা তাদের কিছু স্বজনদের উপহার হিসেবে পাঠান গোলের গুড়। এরপর সেখানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই গুড়। এরপর সেই স্বজনরা তাদের কাছে থেকে গুড় ক্রয় করে কলকাতায় বিক্রি করেন। বেহালা গ্রামের গাছি সুকদেব বলেন, গোলের রস প্রতি কলস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ও গুড় প্রতি কেজি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক কলস রস দিয়ে ৩ কেজি গুড় তৈরি হয়।
গাছিরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা অনভিজ্ঞ চাষি, আমাদের কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দিলে আরও পরিচ্ছন্নভাবে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতে পারি। এক সময়ে এই এলাকার অনেক মানুষ হতদরিদ্র ছিল। আজ আমরা গুড় বিক্রি করে অভাব কাটিয়ে সচ্ছল হয়েছি। এতে কেউ সহায়তা করেনি। কৃষি অফিস থেকে তাদের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের দাবি জানান। তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। গাছিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি সুস্বাদু গুড় প্যাকেটজাত করে দেশের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি দেশের বাইরেও বাণিজ্যিকভাবে পাঠানোর বিষয়ে সুপারিশ করেছেন তিনি।