চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া মৌজার জমি ১৯৯৮ সালে পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। প্রায় দু’-তিন বছর ওই এলাকায় পদ্মার পাড় ভাঙে। এতে অসংখ্য আমবাগান, ফসলি জমিসহ ঘর-বাড়ি, স্কুল-মাদ্রাসা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তবে এর কয়েক বছরের মাথায় পদ্মার গতিপথ বদলে আবারও চর জেগে ওঠে ঘোড়াপাখিয়া মৌজায়। এতে অতীতের বিলীন হয়ে যাওয়া জমি আবারও ফিরে পায় ওই এলাকার মানুষ। পরে জমির মালিকরা স্থানীয়ভাবে বসে সেই জেগে ওঠা চরে নিজেদের জমি পরিমাপ করে আইল সীমানা নির্ধারণ করে নেন। এরপর নিজ নিজ জমিতে তারা বিভিন্ন ফসল আবাদ শুরু করেন। কিন্তু এসব জমি এখনও সরকারিভাবে শিকস্তির অন্তর্ভুক্ত (নদীতে বিলীন)।
ফলে এই জমির খাজনা নেয়া বন্ধ। এতে জমির নামজারি বা বেচাকেনা কোনো কিছুই করতে পারছেন না জমির মালিকরা। জমি দখলে মিললেও কাগজে-কলমে এখনো মেলেনি এসব মানুষের। জমির মালিকানা প্রমাণে তাদের ছুটতে হচ্ছে দপ্তর থেকে দপ্তরে। পদ্মায় বিলীন হয়েছিল ওই এলাকার দো-রশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি এখন অস্থায়ীভাবে অন্যের জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এর স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য কেনা হয়েছে জমি। বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেয়ে শিক্ষকরা জমির কাগজপত্র সংগ্রহ করতে যখন ভূমি অফিসে গেলেন, তখন দেখেন তাদের বিদ্যালয়ের জমিও কাগজে-কলমে এখনও নদীতে বিলীন। এজন্য বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন আগে চর জাগলেও গোটা ঘোড়াপাখিয়া মৌজাকেই শিকস্তি জমি করে রাখা হয়েছে।’ সম্প্রতি ওই এলাকায় শুরু হয়েছে ডিয়াড়া জরিপ (নদীতীরবর্তী জমির জরিপ) কার্যক্রম। এ জরিপ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আবারও চরের জমির মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধান সামনে আসছে। জরিপ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের দখলে আছে, সেইসঙ্গে জমির খাজনার কাগজপত্র ঠিক আছে, তাদের জমি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত হবে।
নদীতে বিলীন হওয়া জমির বিষয়ে আইনের ব্যাখ্যায় চাঁপাই নবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহসীন মৃধা বলেন, যখন কোনো জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, তখন তাকে শিকস্তি জমির অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এর খাজনা নেয়া বন্ধ থাকে। এরপর যদি ৩০ বছরের মধ্যে ওই জমির চর জেগে ওঠে তখন তা পয়স্তি জমি। তখন ওই জমির মালিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকেই বন্দোবস্ত দেয়া হয়। তবে তাকে আবেদন করে বন্দোবস্ত নিতে হয়। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, জরিপ কাজ যারা করছেন, তারা ভিন্ন একটা ডিপার্টমেন্ট। তারা কাজটা শেষ করুক। এরপর যদি কারো জমি শিকস্তি হয়ে থাকে, তিনি যদি আবেদন করেন, অবশ্যই আমরা বিষয়টি দেখবো।