শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাব কর্মকর্তাদের নিষিদ্ধ করতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১২ আন্তর্জাতিক সংগঠনের দাবি ‘মূল্যহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বৃহস্পতিবার প্রতিমন্ত্রী হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সমালোচনা করে কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্য, বিবৃতি বা ঘোষণার কোনো মূল্য নেই আমাদের কাছে। কারণ হিসেবে তিনি সংস্থাটির সঙ্গে সরকারের তরফে দফায় দফায় যোগাযোগ এবং বৈঠক সত্ত্বেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করাকে দায়ী করেন। প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্যটি ছিল এমন “এটা স্পষ্ট যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মৌলিক ইস্যুগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সরকার তাদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও তাদের রিজিওনাল হেড এবং লোকাল রিপ্রেজেনটেটিভের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের পেছনে অনেক সময় দিয়েছি।
তিন-চার বছর আগের সেই বৈঠকগুলোতে তারা মিনিংফুল এনগেজমেন্টের অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি। বরং সেই সব বিরোধী দল যাদের কোনো জনভিত্তি নেই, তাদের মুখপাত্রের মতো অহেতুক সরকারের সমালোচনা করে চলেছে। এ কারণে তাদের সমালোচনার কোনো মূল্য আমাদের কাছে নেই।” উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে র্যাব কর্মকর্তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি সংবলিত ১২ সংগঠনের চিঠির বিষয়টি বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রচারিত রিপোর্টে তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র্যাবকে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাদ দিতে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ পিয়েরে ল্যাকরুয়া বরাবর গত ৮ই নভেম্বরের যৌথ আবেদন করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ ১২ মানবাধিকার সংগঠন। ওই চিঠির বিষয়ে এখানো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বিভাগ। চিঠিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলেছে, ২০০৪ সালের র্যাব গঠনের শুরু থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত র্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, জোরপূর্বক গুম করে দেয়ার বিস্তর অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অপরাধ করে এলেও বাংলাদেশ সরকার তাদের পুরস্কৃত করছে ও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠাচ্ছে। স্মরণ করা যায়, মানবাধিকার লংঘনের গুরুতর অভিযোগ এনে গত ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৭ কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা জারি করে মার্কিন প্রশাসন। সেই নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারির আগে থেকেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংগঠন অব্যাহতভাবে র্যাবের কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির ক’ঘণ্টা আগে (১০ই ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশে ‘জোরপূর্বক গুমের’ ঘটনা নিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তাতে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো বাহিনীর চেয়ে গুমের ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন- র্যাবের দায় বেশি উল্লেখ করে র্যাব কর্মকর্তাদের অনতিবিলম্বে শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানায় সংস্থাটি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্থনিও গুতেরেসের ত্বরিত পদক্ষেপ কামনা করে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ‘গুম’ বিষয়ে স্বাধীন ও আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানানো ছাড়াও দায়ীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সক্রিয় ভূমিকা আশা করা হয়। বাংলাদেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বরারবরই গুমের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে জানিয়ে সংগঠনের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “দাতারা ও জাতিসংঘ কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এখন সেটিই প্রশ্ন।”
আবুল কাসেম
২০ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার, ৮:৩৬বিরোধী দলে থাকলে তাদের এধরনের কথা মূল্যবান।