এখন সরিষা চাষের মৌসুম। সরিষা ক্ষেতের হলুদিয়া প্রা্রকৃতিক সৌন্দর্য ভরিয়ে তুলেছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। এ যেন প্রকৃতির রূপের খেলা। সরিষা চাষে দ্বিগুণ লাভ, ফুল ও পাতা ঝরে জৈব সার তৈরি করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারী জেলার অনেক কৃষক সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়ছে। এবারের মৌসুমে সরিষা চাষ করে গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি লাভবান হবে বলে জানিয়েছে সরিষাচাষিরা।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা সদরের আনাকুল ইসলামের ছেলে সাজু মিয়া তার ৩ বিঘা জমিতে ও লাল মিয়ার ছেলে হাসিনুর তার ২ বিঘা জমিতে এবং পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের পূর্বছাতনাই গ্রামের সফিউদ্দিন এর পুত্র এমদাদুল হক তার আবাদী ৩ একর জমিতে সরিষা লাগিয়ে সাফল্য অর্জনের আশা করেছেন। তারা জানান, গত ২ বছর রে নিজ উদ্যোগে আবাদযোগ্য জমিতে সরিষা চাষ করে প্রতি মৌসুমে অন্যান্য আবাদের তুলনায় বিঘা প্রতি প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত লাভ করে আসছেন তারা। চলতি মৌসুমে সরিষার ফলন বেশি হওয়ায় এবং বর্তমান বাজার দর তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এবার বেশী লাভের আশা করছেন তারা। সরিষাচাষিরা জানান, ডিমলা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলীর পরামর্শে ও সরকারি সার্বিক সহযোগিতায় এবার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।
দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে সরিষা কিনতে আসা ক্রেতারা বলেন, উত্তর অঞ্চলের জমি সরিষাচাষের জন্য খুবই উপযোগী। অন্যান্য এলাকার চেয়ে উত্তরাঞ্চলের সরিষার দানা পরিপূরক হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। সে কারণে এখান থেকে সরিষা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে তারাও প্রচুর লাভবান হচ্ছেন। সরিষা চাষে সাফল্য অর্জন করতে কুমার পাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিমলা কৃষি বিভাগের সরকারি প্রণোদনার ভালো বীজ পেয়ে সঠিক সময় বীজ রোপণ, সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়, রোগ নিরাময়ের জন্য সঠিক মাত্রায় কীটনাশকসহ ফুলফল বাড়ানোর জন্য ভিটামিন ও বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগ করতে হবে। তাহলেই আগাম ফল ফলিয়ে তা বাজারজাত করতে পারলেই উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হলে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তারা বলেন, এক বিঘা সরিষা চাষ করতে বর্তমানে খরচ হয় প্রায় দেড় হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিঘায় ৬ মণ সরিষা পাওয়া যায়। প্রতিমণ সরিষার বর্তমান বাজারমূল্য ৩ হাজার টাকা। অন্যান্য ফসল চাষ করে প্রতি বিঘায় যে পরিমাণ লাভ হয় তার চেয়ে ঐ পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করে দ্বিগুণ বেশি লাভ পাওয়া যায়। এছাড়া সরিষা চাষ করলে ফুল ও পাতা ঝড়ে পড়ে জৈব সার তৈরি হয়ে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। সে কারণে এ জমিতে পরবর্তীতে রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয় না ও ধানের ফলনও ভালো হয়। সরিষা চাষে একদিকে যেমন বেশি লাভ হয় অন্যদিকে জমির উর্বরতা বাড়ায়। সেদিক বিবেচনা করে সাধারণ কৃষকরাও সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
ডিমলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেকেন্দার আলী জানান, চলতি মৌসুমে ডিমলা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ শ’ ৬৫ হেক্টর জমি, উৎপাদন হবে ১ হাজার ৭১ মে. টন। যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ এলাকার জমি বেলে দোয়াশ পানি ধারণের ক্ষমতা কম, পানি ধারণ ক্ষমতার জন্য জমিতে জৈব সারের প্রয়োজন। সরিষা চাষ করলে খাবার তেলের চাহিদা পূরণসহ পাতা ও ফুল পড়ে জৈব সার তৈরি করে একদিকে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে জমিতে পানি ধারণ ক্ষমতাও বাড়বে।