প্রকৃতিপ্রেমী বাঙালির কাছে শীতের আবহ একটু অন্যরকম। নতুন চালের পিঠা, কুয়াশা বিলাস, শিশির ভেজা ঘাস আর টাটকা সবজির সমারোহে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে শীতকাল। সেই আমেজে বাড়তি মাত্রা যোগ করে হলদে ফুলের কন্যা ‘সরিষা’। দিগন্তজোড়া সরিষা ফুলের একেকটি ক্ষেত যেন হলুদের চাদরে মোড়ানো ভালোবাসা।
নিয়মতান্ত্রিক ভাবেই বছর ঘুরে শীত এসেছে নির্মল প্রকৃতির স্বর্গরাজ্য খ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। শীতের শুরু থেকেই বাকৃবি’র বিস্তৃত মাঠজুড়ে অপূর্ব সুন্দর সরিষা ফুল মোহিত করছে সবাইকে। তবে দর্শনার্থীদের চাপে সরিষা ক্ষেতের অনেকটা এখন নষ্ট হয়ে গেছে। ফুল ফোটার আগেই পদদলিত হয়ে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকটি প্লট।
এর ফলে সরিষা ক্ষেতের সৌন্দর্য আজ বেদনার গল্পে মিলে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি মাঠ ও এর সংলগ্ন প্লটগুলোতে প্রচুর সরিষার আবাদ করা হয়েছিল। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কৃষকের হাতেই লাগানো হয় এসব চারা। এর মধ্যে কয়েকটি প্লটে সরিষা ফুল প্রস্ফুটিত হয়ে মুগ্ধতা ছড়াতে শুরু করে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই। তা দেখতে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী ছুটে আসেন শুষ্ক প্রকৃতির নির্মল নির্যাস গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনই।
প্লটের ভেতরে প্রবেশ করতে বাধ্যবাধকতা থাকলেও নিয়মের বালাই না করেই ভেতরে ঢুকে পড়ে তারা। সরিষার ক্ষেতে নিজেকে ফ্রেমবন্দি করতে অতিউৎসাহী কিছু দর্শনার্থী নষ্ট করছে শিক্ষার্থী ও কৃষকের কষ্টের ফসল। এমনকি প্লটের ভেতরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢুকে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরাও হিমশিম খাচ্ছেন দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে।
বর্তমানে অনেক প্লটের চারা উপড়ে গেছে। সেখান থেকে সরিষা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় ঘুরতে এসে অনেক শিক্ষার্থী হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ বলেন, শীতকালে সরিষা ফুল আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য অনেক বৃদ্ধি করে। তাই অনেক দর্শনার্থী আসেন এখানে ঘুরতে। কিন্তু শুধু কয়েকটি ছবি তোলার জন্য আমাদের শিক্ষার্থী ও কৃষকের কষ্টের ফসল এভাবে নষ্ট হবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। কথা হয় আনোয়ার হোসেন নামের এক নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সমাগম হয় সরিষা ক্ষেতে। আমরা চেষ্টা করছি যেন প্লটের ভেতরে কেউ না প্রবেশ করে। কিন্তু লোকবল কম হওয়ায় সবদিকে খেয়াল রাখতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বাকৃবি’র প্রধান নিরাপত্তা অফিসার মহিউদ্দীন হাওলাদার বলেন, আমাদের নিরাপত্তা কর্মী এখন কিছু কম আছে। করোনার কারণে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। ২০ জনকে নতুন নিয়োগের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের নিয়োগ হলে আমরা ক্যাম্পাসকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো।