গ্রামে সেতু নির্মাণ হয়েছে। চলছে সড়ক তৈরির প্রাথমিক কর্মযজ্ঞ। স্বাধীনতার পর পরিবর্তনের এই ধারায় মহা খুশি রুপসীপাড়া ও লামা সদরের হাজার হাজার মানুষ। এখন দাবি একটাই, সেতুর পর সেই পুরনো মাটির রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু হোক। স্থানীয়দের মতে, চলমান এসব কাজ সম্পূর্ণ হলে লামা সদর ও রুপসী পাড়া দুই ইউনিয়নের অন্তত ৯টি ওয়ার্ডের যোগাযোগ খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
বান্দরবানের লামা উপজেলার রুপসী পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পর থেকে নেই কোন যান চলাচল। সেই পুরনো মাটির রাস্তা ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজ করতে হয় পাহাড় পাড়া, মেওয়াচর, বলিয়ারচর, চিউনি, বরিশাল পাড়া, এমশন পাড়া, পাউপাড়া, লক্ষণ ঝিরি পাড়া, পানচি পারা, নতুন লাইল্লাপাড়া, হেডম্যান পাড়া, ঘিলা পাড়াসহ অন্তত বিশ গ্রামের মানুষকে।
কৃষি ও তামাক নির্ভর এসব গ্রামের মানুষকে তাদের উৎপাদিত পণ্য নৌকা দিয়ে নিতে হতো বাজারে। স্বাধীনতার পর থেকে এভাবেই চলে আসছিল ২০ হাজার মানুষের জীবন যাত্রা। কিন্তু সম্প্রতি দুই পাড়ের মানুষের অবিশ্বাস্য স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলছে।
রুপসীপাড়া পোপা খালের উপর পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্মীত ৬০.০০মিটার সেত এখন দৃশ্যমান। চলছে ওপারের এপ্রোস সড়কসহ বাকি সড়কের প্রাথমিক কার্যক্রম।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লামা সদর ইউনিয়নের ৫টি ওয়ার্ড এবং রুপসী পাড়ার ৪টি ওয়ার্ডের মানুষের চলাচল সুবিধার্থে পোপা খালের উপর ব্রিজের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। সড়কের সঙ্গে যুক্ত করতে চলছে এপ্রোচের কাজ।
এসময় কথা হলে মেউলাচর এলাকার কৃষক তৌহিদুল ইসলাম, অংহ্লা পাড়া এলাকার মাহাবুবুল আলম এই প্রতিবেদককে জানান- শুষ্ক মৌসুম আসলে তাদের গ্রামগুলোতে আনন্দ দেখা দেয়। কারণ বর্ষা মৌসুমে নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঘরবন্দি হয়ে পড়ে মানুষ। স্কুল-মাদরাসায় যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা।
লামা মুখ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী তাহমিনা আক্তার ও বইক্কুমঝিরি এলাকার গৃহিনী স্বপ্না বেগম জানান, ‘অবহেলিত আমাদের এলাকায়পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড নতুন ব্রিজ করেছে। সড়ক করবে এমন সংবাদ যেন এলাকার মানুষের মাঝে ঈদের আনন্দের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
বইল্লারচর এলাকার পান ব্যবসায়ী আবদুসাত্তার জানান, বহু কাল ধরে তিনি নৌকায় নদী পার হয়ে এসব গ্রামেব্য বসা করেন। তার মতো অনেক ব্যবসায়ী ও কৃষকতাদের উৎপাদিত সবজি, তামাক, গাছ-গাছালিসহ বিভিন্ন পণ্য নৌকায় করে পরিবহন করতো। এখনন তুনব্রিজ হওয়ায় তাদের দুর্ভোগ কমে গেছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রুপসী পাড়াইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মারমা বলেন- লামা সদর ইউনিয়নের সঙ্গে রুপসী পাড়া ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে পোপাখালের উপর নির্মিত উন্নয়ন বোর্ডের ব্রিজ। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এই কল্যাণে বদলে যাবে সেখান কার মানুষের জীবন যাত্রা। স্বাধীনতার পর থেকে এখানে ব্রিজ না থাকায় মানুষ পিছিয়ে ছিল।
তিনি আরো বলেন- বান্দরবানের আনাচে-কানাচে, কোথায় কিলা গবেতার প্রয়োজনীয়তা মানুষ না বলার আগেই বুঝতে পারেন পার্বত্যমন্ত্রী। সেই ধারাবাহিকতায় রুপসী পাড়া পোপা খালে ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে। ব্রিজটি নির্মাণে পার্বত্যমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াছির আরাফাত জানান, মানুষের জনভোগান্তি দূর করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীর নির্দেশনায় ২০১৯ সালে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজের কাজ শুরু করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। ২০২২ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথার রয়েছে। ইতিমধ্যেই পুরো ব্রিজের কাজ শেষ হয়েছে। এখন এপ্রোস সড়কের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই বাকি সড়কের কাজও শুরু হবে।