খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা মোড়ের খানজাহান আলী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) মো. ইলিয়াস হোসেন ফকির (৩০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতালের দুই স্টাফকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার রাতে এ ঘটনাটি ঘটে। মৃত ইলিয়াস হোসেন খুলনার দাকোপ উপজেলার জয়নগর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ফকিরের ছেলে।
নিহতের স্ত্রী পারভীন বলেন, পাঁচ মাস আগে ইলিয়াস ফকিরের হার্ণিয়া হয়। তখন তিনি ওই এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসককে দেখিয়ে ওষুধ সেবন করেন। তাতে সুস্থ না হওয়ায় তিনি নগরীর মোহাম্মাদ নগরের ফার্মাসিস্ট মনির সঙ্গে কথা বলেন। তখন ইলিয়াসকে খানজাহান আলী হাসপাতালে গিয়ে অপারেশন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
সে অনুযায়ী রোববার দুপুর ১টার দিকে বাড়ি থেকে হাসপাতালে আনা হয় তাকে। বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোস্তফা কামাল, ডা. মোর্শেদ ও ইন্টার্ণ চিকিৎসক ডা. মোহন অপারেশনের জন্য কক্ষে প্রবেশ করেন। অপারেশন সফল হয়েছে বলে চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের জানান। এর কিছুক্ষণ পর খিঁচুনি উঠেছে। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে আমাদের পরিবারের এক সদস্যকে ডেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক পালিয়ে যান।
নিহতের বেয়াই মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হার্ণিয়া অপারেশনে কোনো রোগী মারা যায় না। রোগীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই হাসপাতালের পরিচালক ও অন্যান্য চিকিৎসকরা একে একে পালিয়ে যেতে থাকেন। অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ইলিয়াসকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের সদস্যরা সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসেন।
নিহতের ভাতিজি বীথি বলেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হার্ণিয়া অপারেশন করতে আসেন আমার চাচা। অপারেশন করতে নেয়ার এক-দেড় ঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়। তখন আমার ফুফু চাচার চোখ বড় বড় হয়ে যেতে দেখেন। ডাক্তাররা কেউ ছিলেন না। পরে তিনি মারা যান।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মৃতের স্বজনরা জানিয়েছেন, রোববার দুপুরে হার্ণিয়া অপারেশনের জন্য ইলিয়াসকে খানজাহান আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। তাকে একটি ইনজেকশন দেয়ার পর খিঁচুনি শুরু হয়। অপারেশন কক্ষে উপস্থিত চিকিৎসক ও নার্স এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেননি। কিছু সময় পর ওটি টেবিলেই ইলিয়াসের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে মৃতের স্বজনরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য স্টাফ পালিয়ে যান। ইলিয়াসের বড় ভাই সোহরাব হোসেন বলেন, ইলিয়াসের তিন সন্তান। তাদের কি হবে? ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। দোষী চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, রোগীর মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। বিক্ষুব্ধ স্বজনদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতালের দুই স্টাফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।