সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধোপাজান চলতি নদীতে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসক বরাবরে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ছাতকের পাটিবাগ গ্রামের মুজিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। মুজিবুর রহমান লিখিত অভিযোগে বলেন, ধোপাজান চলতি নদীর বালু পাথর মহাল থেকে অবৈধ ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে বালু পাথর উত্তোলন করে নিজেরাই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিলামের আয়োজন করে ওই চক্রের সদস্যরা। পরে নিজেরাই নিলামের বালু পাথর ক্রয় করে বৈধ বালু-পাথরের ছাড়পত্র নেন। নিলামের মালামাল যেভাবে আছে সেভাবে রেখেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নদী থেকে হাজার হাজার ফুট বালু, পাথর উত্তোলন করে ট্রলার, ট্রাক, বাল্কহেড, কার্গোযোগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনাবাধায় এসব বালু, পাথর বিক্রি করে ওই চক্র। অভিযোগে দাবি করা হয়, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ লাখ ফুট বালু ও এক লাখ ফুট পাথর এই নদীতে লোড দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
অভিযোগে উল্লেখ করা ওই চক্রের সদস্যরা হলো- বরিশালের সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুরের মমিন মিয়া, হুরারাকান্দার রমজান আলী, গুদিগাঁওয়ের আব্দুল মালেক, মুসলিমপুরের মনা মিয়া, ভাদেরটেকের বাবুল মিয়া, কাইয়ারগাঁওয়ের মকবুল হোসেন, ডলুরার সাদেক মিয়া, কাইয়ারগাঁওয়ের ওমর আলী, ডলুরার দেলোয়ার হোসেন, সৈয়দপুরের ফারুক মিয়া, ভাদেরটেকের শাহিনুর মিয়া, গুচ্ছগ্রামের শারপিন, ডলুরার কাজল মিয়া ও লাল মিয়া, হুরারকান্দার লায়েছ মিয়া, পূর্ব ডলুরার কালা মিয়া, ভুট্টু, খুরশিদ ও পাভেল আহমদ। সম্প্রতি তোলা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা হতে বালু, পাথর উত্তোলন করে হালুয়ারঘাট বাজার ও মঈনপুর গ্রামে ট্রাক দিয়ে ক্রাশার মালিকদের কাছে বিক্রি করা হয়। সুরমা ইউনিয়নে পূর্ব সদর গ্রামের সামনের চলতি নদী দিয়ে অসংখ্য বালু-পাথর বোঝাই বাল্কহেড বের হতেও ভিডিওতে দেখা যায়। এ ছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগবেড় বাজার হয়ে ট্রাক-ট্রলিতে বালু-পাথর যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে।
মুজিবুর রহমান লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, এই প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার ঘনফুট বালু-পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযুক্ত সেলিম উদ্দিন বললেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি ধোপাজান চলতি নদীতে কোনো ব্যবসা করি না। মমিন মিয়া বললেন, শত্রুতাবশত আমার নাম দেয়া হয়েছে। আমি আগে ব্যবসা করতাম, এখন আর বালু-পাথর ব্যবসা করি না। ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক বললেন, আমি বালু-পাথর ব্যবসায়ী নই, ইউএনও সাহেব ও এসি ল্যান্ড সাহেব একবার বালু-পাথর নিলাম করেছিলেন। আমি নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ৫০ লাখ টাকার পাথর নিলামে গ্রহণ করি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমি তা বিক্রি করি। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, অভিযোগটি আমি পড়েছি, অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন কঠোরভাবে ঠেকানোর চেষ্টা করবো আমরা। বালু-পাথর উত্তোলন হয়ে থাকলে বা হলে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে রেখে এলাকায় মাইকে প্রচার করে নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।