টাঙ্গাইলের মধুপুর বন বিভাগের মহিষমারা বিটের বনভূমি জবর দখল ও সামাজিক বনায়নের গাছ চুরি অব্যাহত থাকায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এ বিট এলাকায় সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে অনুমোদনহীনভাবে পাড়া-মহল্লায় চলছে স’মিল। এসব মিলে দেদার চলছে কাঠ চিরাই। প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা ও মিলের যন্ত্রাংশ জব্দ করলেও দমানো যাচ্ছে না স’মিল কারবারিদের। এতে বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে। ঐতিহ্য হারাচ্ছে লালমাটি মধুপুরগড়ের শালবন। বনভূমি দখলে মেতে উঠেছে স্থানীয় ভূমিখেকোরা। ভূমিখেকোদের লোলুপ দৃষ্টির কারণে সামাজিক বনায়নে চাষ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে আনারস, আদা, হলুদ কলাসহ নানা কৃষি ফসল।
অপরদিকে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী বিট থাকায় স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী জেলার সংঘবদ্ধ গাছ চোররা মাঝেমধ্যেই গাছ চুরি করে থাকে। ফলে সামাজিক বনায়নের অংশীদাররা কাঙ্ক্ষিত লাভ হতে বঞ্চিত। সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমি জবর দখল ও বসতবাড়ি নির্মাণে দালালদের দিতে হয় সেলামি। স’মিল, জবর দখল উচ্ছেদ, গাছ চুরি বন্ধের দাবি স্থানীয়দের। মধুপুর রেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইল বন বিভাগের মহিষমারা ও চাড়ালজানি বিট মিলে মধুপুর রেঞ্জ। এই রেঞ্জের মহিষমারা বিটের ৭৫৬ দশমিক ১২ একর বন ভূমি ১২শ’ ১৩ জন অবৈধ দখল করে আছে এবং চাড়ালজানি বিটে ২ হাজার ৩৭৩ দশমিক ৬২ একর বন ভূমি ১৫শ’ ৩৭ জন ব্যক্তি অবৈধ দখল করে আছে। ইতিমধ্যে ১শ’ ৩ দশমিক ৯০ একর বন ভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৩ হাজার ২৫ দশমিক ৮৪ একর বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এসব বনভূমি উদ্ধার করা হবে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘাটাইল সীমান্ত থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া ঘেঁষে মোটেরবাজার পর্যন্ত মহিষমারা বিট বিস্তৃত। স্থানীয় দালালরা বসতবাড়ির ঘর তৈরির খোঁজ রাখেন। নতুন ঘর ও বিল্ডিং এর কাজ শুরু করলেই বাধা হয়ে দাঁড়ান। তাদের সঙ্গে সমঝোতা রফাদফা করতে হয়। বনবিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে স্থানীয় দালালরা এসব কাজ করছে। এভাবেই চলছে মাঝে মধ্যে গাছ চুরি জবর দখল ঘর তৈরির অর্থ লোপাটের ঘটনা। এসব তথ্য স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। আউশনারা কলেজ পাড়া ও হাজীপাড়া এলাকার খোরশেদ, জমসের ও মর্তূজ আলীর প্লট থেকে মোটের বাজারের ওমর ফারুক কয়েকটি গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘোড়াগাড়িসহ স্থানীয়রা আটক করে। পরে বন বিভাগের লোক এসে আটককৃত গাছ মহিষমারা বিটে নিয়ে যায়। এভাবে শুধু খোরশেদ, জমসের মর্তূজ আলীর গাছই নয় তিনি রাতে আঁধারে গাছ কেটে থাকেন বলে স্থানীয়রা জানান। এ ব্যাপারে ওমর ফারুক জানান, তার কাছে খোরশেদ আসবাবপত্র তৈরির জন্য গাছ চেয়ে ছিল তাই তার শ্রমিক দিয়ে তিনি গাছ কাটিয়েছেন। ওমর ফারুক দাবি করেন, তিনি এ বিটের ২০০৯-২০১০ সালের সামাজিক বনায়ন ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সামাজিক বনায়ণ ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে থেকেও অবাধে গাছ কেটে সামাজিক বনায়ন উজার করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সাথে জড়িত থাকার দাপটে তার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। তার বিরুদ্ধে একাধিক বন মামলাও রয়েছে। মোটের বাজারের কলেজ রোডের ছামান আলী নামে এক ব্যক্তি কার্টিজ মূলে ক্রয় করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। শুধু ছামান আলী নয় মহিষমারা বিট এলাকায় বন বিভাগের জমি দখল ভরাট এভাবেই জবর দখলকৃত ভূমিতে চলছে। গত শনিবার মহিষমারা এলাকায় হামের বাজারের কাছে মহর আলীর সামাজিক বনায়নের প্লট থেকে কয়েকটি গাছ চুরি হয়। মহর আলীর স্ত্রী জানান, স্থানীয় সিএফডাব্লিউ শামছুল হক গাছ কেটে নিয়েছে। শামছুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গাছ দুটি সামাজিক বনায়নের নয়। তাদের বাড়ির গাছ ক্রয় করে কেটেছি। এ ব্যাপারে মহিষমারা বিট কর্মকর্তা মো. মমিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে প্লটে গিয়ে ছিলাম। এ ব্যাপারে মামলা দায়ের হবে। এ ব্যাপারে সদ্য বিদায়ী মহিষমারা বিট কর্মকর্তা আ. আওলাদ জানান, এখন আগের মতো গাছ চুরি হয় না। গাছ চুরির সাথে সাথে আমরা মামলা দেই।
তিনি বলেন, মোটের বাজার এলাকার গাছ চুরির ঘটনায় ওমর ফারুকের নামে মামলা হয়েছে। এখন সিএফডাব্লিউওরা তাদেরকে সহযোগিতা করে থাকে। ঘর নির্মাণে টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। মধুপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আমিনুর রহমান জানান, মহিষমারা বিটে ৭৫৬.১২ একর ১২১৩ জন ও চাড়ালজানি বিটে ২৩৭৩.৬২ একর বন ভূমি ১৫৩৭ জন ব্যক্তি অবৈধভাবে দখল করে খাচ্ছে। এর মধ্যে ১০৩.৯০ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অবৈধ দখল থেকে বনভূমি উদ্ধার করে বনায়ন করা হবে। তিনি জানান, যারা দখল করে আছে প্রয়োজনে তাদেরকে সামাজিক বনায়নে অংশীদারী করা হবে। এতে তারা বনায়নে সুবিধা পাবে।