× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সুজনের গোলটেবিল / নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সন্দেহ অবিশ্বাস দূর করা জরুরি

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৭ জানুয়ারি ২০২২, বৃহস্পতিবার

সংসদে পাসের অপেক্ষায় থাকা সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের বেশকিছু ত্রুটি চিহ্নিত করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলেছেন, এই আইনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হলে তা ভালো ফল বয়ে আনবে না। আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি করবে। প্রেসিডেন্টের কাছে সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নামগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হলে এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত আইনে বেশকিছু সংশোধনী আনার পরামর্শ দিয়েছে নাগরিক সমাজ। বুধবার নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে ‘প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন: জনআকাঙ্ক্ষা ও করণীয়’ গোলটেবিল বৈঠকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব পরামর্শ দেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনকে নতুন মোড়কে আনা হয়েছে। কোনো আলাপ আলোচনা না করে সরকারের অনুগত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নূরুল হুদার মতো বিতর্কিত ও অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্যই সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এই আইন করা হচ্ছে।
সরকার প্রস্তাবিত আইনে কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কোনো বিধান নেই। সুজন প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের বিষয়টিই মূল বিষয়। সুজন প্রস্তাবিত খসড়ায় কমিটির কার্যাবলীর স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য নামের তালিকা প্রকাশ এবং যাচাই প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য গণশুনানির বিধান রাখা হয়েছে। কমিটির নাম যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ করার লক্ষ্যে দুই ধাপে নামের তালিকা প্রকাশের বিধান রাখা হয়েছে- ১৫ থেকে ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং ৭ জনের চূড়ান্ত তালিকা। শুধু তা-ই নয় সুজন প্রস্তাবিত খসড়ায় যাচাই প্রক্রিয়া সমপর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়েছে। রাখা হয়েছে কমিটির সভার পূর্ণাঙ্গ কার্যবিবরণী এবং সদস্যদের ভোট প্রদানের তথ্য লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণের বিধান। কোনো নাগরিক যদি কমিটির সভার কার্যবিরণীর অনুলিপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, তবে অনতিবিলম্বে তা প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে, যাতে নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত হয়। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সঠিক ব্যক্তিদের অনুসন্ধান ও যাচাই বাছাই করা হয়েছে, নাকি সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে সে সমপর্কে নাগরিকরা অজ্ঞাতেই রয়ে যাবে। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাস যথাযম্ভব কমিয়ে এনে সবার জন্য কল্যাণকর একটা সর্বজনীন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্যই কমিটির কার্যাবলীকে স্বচ্ছ রাখাসহ যাচাই প্রক্রিয়ায় নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।  
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো আইন করা যায় না। আমাদের প্রস্তাবনা ছিল অনুসন্ধান কমিটিতে সাবেক একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাখা, কারণ তার নির্বাচন পরিচালনা সমপর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। কমিশনারগণের যোগ্যতা-অযোগ্যতার ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে লিখিত-অলিখিত যে কোনো অভিযোগ থাকলেই তাকে বিবেচনা থেকে বাদ দিতে হবে। সুপারিশকৃত নামগুলো একটা পার্লামেন্টারি হিয়ারিং-এ যাবে, সেখানে আলাপ আলোচনা হবে। কাদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে সেটা প্রকাশ করে দিতে হবে।  
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে দুটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। একটি হচ্ছে তিনি নিরপেক্ষ কি না। দ্বিতীয়ত তার ভেতরে আইন প্রয়োগের সক্ষমতা ও সাহস রয়েছে কিনা। নির্বাচনে শতাধিক লোক মারা যাওয়ার পরও কমিশনাররা বলছেন আমাদের কোনো দায় নেই। এরকম ব্যক্তি আসলে যেরকম চলছে সেরকমই থাকবে। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টারি শুনানির বিষয়টি না থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সমপৃক্ততা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান বলেন, সবার আলোচনা থেকে বুঝা যায় দুটি বিষয়ে সবাই একমত, মিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পলিটিক্যাল কনসেনসাস এবং স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পলিটিক্যাল কনসেনসাস তৈরি করা কিছুটা দুরূহ হলেও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে স্বচ্ছতার দিকটা নিশ্চিত করা সম্ভব।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটি হচ্ছে সরকারের ইছাপূরণের আইন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ছাড়া শুধু কমিশন আইন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।  
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু ইন্টারন্যাশনাল গাইডিং প্রিন্সিপাল আছে। তার প্রথমটি হচ্ছে পলিটিক্যাল কনসেনসাস, সব দলকে একমত হতে হবে; ট্রান্সপারেন্সি, সব ওপেন করে দিতে হবে; ব্যাপক স্ক্রুটিনি, ব্যাপকভাবে যাচাই করতে হবে; রোবাস্ট ক্রাইটেরিয়া, যারা কমিশনার হবেন তারা কারা, তাদের মোর‌্যাল ইন্টেগ্রিটি কেমন, ইন্টেলেকচুয়াল অনেস্টি কেমন আর ফাইনালি হচ্ছে সিটেজেন্স ট্রাস্ট, পুরো প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা থাকতে হবে।    
গোলটেবিল বৈঠকে সুজন-এর নির্বাহী সদস্য প্রফেসর সিকান্দর খান, শফিউদ্দিন আহমেদ, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর