× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ঢাকায় দূষণে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

দেশ বিদেশ

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার

ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর। এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। করোনার চেয়ে দেশে ১০ থেকে ২০ গুণের বেশি মৃত্যু হয় অসংক্রামক রোগে। সংক্রামক রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও সংক্রামক রোগের প্রতি গুরুত্ব বেশি দেয়া হয়। দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশ মারা যায় অসংক্রামক রোগে। এদিকে গুরুত্ব না দিলে ২০৪০ সালে এই হার ৭০ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশে উঠে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রায় ৬৮ ভাগ অর্থ জনগণ পকেট থেকে ব্যয় করে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি।
গতকাল প্রথম জাতীয় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন অধিবেশনে অংশগ্রহণ করে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠান হচ্ছে। ২৮শে জানুয়ারি ঢাকা ঘোষণার মধ্যদিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনসিডিসি), বাংলাদেশ নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ ফোরাম (বিএনসিডিএফ), বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল রিসার্চ প্ল্যাটফরম এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম, আইসিডিডিআর,বি’, ব্র্যাক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পপুলার মেডিকেল কলেজসহ ৩০টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম পর্বে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, এ কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এনসিডি (অসংক্রামক রোগ) একটি নতুন ও চলমান বোঝা। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার রোগী উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সরকার অসংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে ক্যান্সার হাসপাতাল হচ্ছে। হৃদরোগের চিকিৎসায় গত দুই দশকে দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সব হাসপাতালে এনসিডি কর্নারে ৫টি ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন হিসেবে নগর স্বাস্থ্যের দায়িত্ব আমাদের, আমরা এনসিডির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকা সিটিতে পার্ক ও ফুটপাথ স্থাপন করা হচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর, এর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। মেয়র বলেন, আমরা আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে কাজ করছি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় দুটি হাসপাতাল আছে, সেগুলোর উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ হতে কাজ করছে সরকার।
করোনার চেয়ে ১০-২০ গুণ বেশি মৃত্যু অসংক্রামক রোগে: সম্মেলনের প্রথম পর্বে স্বাস্থ্য অর্থ ইউনিটের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন মাহমুদ বলেন, কোভিডে সারাবিশ্ব এই মুহূর্তে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশে কোভিডে যে মৃত্যু, অসংক্রামক কোনো কোনো রোগে মৃত্যু তার চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণেরও বেশি। শুধু ধূমপানজনিত কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে তিনশ’ মানুষের। ক্যান্সার, টিভি, হার্ট ডিজিস সব অসংক্রামক রোগ এবং এগুলোর কারণে যে মৃত্যুর হার, প্রত্যেকটির মৃত্যুর হার কোভিডের মৃত্যুর থেকে ৫ গুণ। কিন্তু কেন যেন আমরা শুধু সংক্রামক রোগের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিভিন্ন গবেষণা তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ৮.৪ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সবাইকে পরীক্ষা করলে সংখ্যা বাড়তে পারে। তাদের শুধু ইনসুলিনের জন্য বছরে খরচ হচ্ছে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। শুধু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অন্য বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। একটি গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৬৭ দশমিক ৫ ভাগ অর্থ জনগণ পকেট থেকে ব্যয় করে। এটি নিঃসন্দেহে অনেক বেশি। এখানেও একটি হিসাব বারবার বাদ পড়ে যায়। যারা সরকারি কর্মচারী রয়েছেন তাদের জন্য সরকার প্রতি মাসে হেলথ অ্যালাউন্স দিয়ে থাকে দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এটির পরিমাণও ছয় হাজার কোটি টাকা। গবেষণার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয় তার ৭০ ভাগই অসংক্রামক রোগে। এটা বৈশ্বিক সমস্যা। ২০৪০ সালে এই হার হয়তো ৮০ শতাংশে উঠে যাবে।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ইন্টান্যাশনাল সোসাইটি ফর আরবান হেলথ (আইএসইউএইচ)- এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জো আইভি বাফর্ড, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনসিডি টিম লিডার (ব্যাংলাদেশ) সাধনা ভাগওয়াত, ওয়ার্ড ওরবেস্টি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক জন উইলডিং, অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্ট্রর ডা. মুনির আহমেদ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল রিসার্স সেন্টারের রিসার্স প্রধান অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানুর রহমান, বিএসএমএমইউ’র পাবলিক হেলথ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারিহা হোসেন। দ্বিতীয় পর্বে গবেষণা পত্র উপস্থাপন করেন ডা. মিথিলা ফারুক, অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, সানজিদা বিনতে আলী, আন্তর্জাতিক স্পিকার ডা. কিংসলে অ্যাঘো, বিলকিস বানু, নাভিরা আবতাবী বিনতে ইসলাম, খোন্দকার ফাতেমা। এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন, আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটির বৈজ্ঞানিক সেক্রেটারি ডা. আলেয়া নাহিদ। প্রধান অতিথি ছিলেন পিওর আর্থের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মাহফুজুর রহমান।
বিকালে চতুর্থ পর্বে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, অসংক্রামক রোগ মানে অছোঁয়াচে রোগবালাই। আমরা এখন ছোঁয়াচে রোগের ধাক্কায় আছি। আমরা রোগ যদি আটকাতে পারি তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। তিনি বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সেবাটা মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়া দরকার। সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ৫ থেকে ৭ বছর লাগবে। আগামী বাজেট থেকে যদি আমরা বাড়তি বরাদ্দ শুরু করি, তাহলে ৫ বছরে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে এই অসংক্রামক রোগ বালাইয়ের ঠেকানোর একটা ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম সাদি, বিএসএমএমইউর পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোমেন রাইহান। প্যানেল আলোচক ছিলেন ইএএসডি এর উপদেষ্টা ডা. আব্দুন নূর তুষার, সিডার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. জহিরুল ইসলাম, বৃটিশ হাইকমিশনের হেলথ অ্যাডভাইজার ডা. শফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আয়োজক কমিটির বৈজ্ঞানিক সেক্রেটারি ডা. আলেয়া নাহিদ।
ডা. সামিউল ইসলাম সাদি বায়ুদূষণের কারণে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি উল্লেখ করে বলেন, ৩০ শতাংশ বায়ুদূষণ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসে থাকে। আমরা যদি অসংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে এখনই যুদ্ধের মনোভাব নিয়ে না নামি তাহলে এর ব্যাপকতা দিন দিন বাড়তেই থাকবে। সামাজিক আন্দোলন ছাড়া এর ব্যাপকতা রোধ করা সম্ভব না। কোভিড আক্রান্ত থাকার কারণে জুমে যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপকতা দেখা দেয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্য সাংবাদিকতার গুরুত্ব ছিল না। স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির রিপোর্ট ছাড়া আর কোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুসন্ধানী রিপোর্ট খুব একটা চোখে পড়ে না। এর কারণও আছে। যে ধরনের প্রশিক্ষণ পাওয়া দরকার স্বাস্থ্য সাংবাদিকরা সেই ধরনের প্রশিক্ষণ পায় না। এনসিডি’র বিরুদ্ধে আমাদের দেশে তেমন কোনো আন্দোলন নেই।  ডায়াবেটিস নিয়ে কিছুটা চোখে পড়ে। ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, মানুষের গড় আয়ু বাড়ায় অসংক্রামক রোগসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধি বাড়ছে। নতুন নতুন রোগও এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। আমাদের দেশ ছোট- মানুষ বেশি এ কারণে আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর