× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রাজধানীতে গ্যাসের তীব্র সংকট

শেষের পাতা

তামান্না মোমিন খান
২৮ জানুয়ারি ২০২২, শুক্রবার

ঘরে গ্যাস নেই। বাইরে করোনা। এমন পরিস্থিতিতে দিশাহারা রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। শীত মৌসুম এলেই কমে যায় গ্যাসের চাপ। কিন্তু এবার শীতে রাজধানীতে গ্যাস সংকট চরমে চুলা জ্বলছেই না। সকাল সাতটার মধ্যে গ্যাস কমতে থাকে আর আটটার মধ্যে চুলা বন্ধ। একের পর এক ম্যাচের কাঠি পোড়ালেও নেই গ্যাসের দেখা। ঘড়ির কাঁটায় যখন বেলা তিনটা  তখন আবার একটু একটু করে আসতে থাকে গ্যাস।
রাত বাড়তে থাকলেও গ্যাসের চাপ বাড়ছে না। এভাবেই জ্বলছে রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার গ্যাসের চুলাগুলো। এদিকে কবে কাটবে এই গ্যাস সংকট এর কোনো সদুত্তোর নেই তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে। শীতে  লাইনে সাপ্লাই কম, আশুগঞ্জে গ্যাস  ক্ষেত্রে  টেকনিক্যাল  সমস্যা গ্যাস সংকটের কারণ বলছে তারা। তবে সহসাই সংকট কাটছে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তিতাস। শীতের সকালের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে গৃহকর্ত্রীদের। একদিকে রাত জেগে রান্না করতে হয়। আবার ভোরে উঠে নাস্তার জোগান দিতেই গ্যাস হাওয়া। ফার্মগেইট,  তেজকুনীপাড়া, নাখালপাড়া এলাকায় সাড়া বছরই গ্যাসের চাপ কম থাকে। কিন্তু এ বছর শীতের সময় গ্যাসের কঠিন সংকট। বছরের পর বছর একই অবস্থা থাকলেও কোনো সমাধান পাচ্ছে না এলাকাবাসী। ফার্মগেইট এলাকায় বাস করেন বীথি। সদ্য মা হয়েছেন। মেয়ের বয়স বিশদিন। বীথি বলেন- গ্যাসের সংকটে খুব কষ্টে আছি। খাওয়া-দাওয়ার তো কষ্ট আছেই। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে গরম পানির। ছোট বাচ্চার জন্য সবসময় গরম পানির দরকার। ডাক্তার আমাকেও গরম পানি ব্যবহার করতে বলেছে। কিন্তু গ্যাসই তো থাকছে না। সকালে চলে যায়, আসে বিকালে। তারপরও পুরো চাপ থাকছে না। এমনিতেই সারা বছর গ্যাসের সমস্যা থাকে এই এলাকায়। কিন্তু এখন চুলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অল্প অল্প গ্যাস থাকলেও অন্তত পানিটা তো হালকা গরম করা যেত। সেটাও তো করা যাচ্ছে না। তেজকুনিপাড়ায় থাকেন রোমা ইসলাম। বলেন, গ্যাস সংকটে রান্না করা কঠিন হয়ে গেছে। এক তরকারি রান্না করাও কঠিন হয়ে যায়। ভাত রাইস কুকারে রান্না করছি। খুব কষ্টে আছি। এখন এই গ্যাসের চুলা যেন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। ফেলতেও পারছি না, গিলতেও পারছি না। মাঝে মাঝে মনে হয় লাইনের চুলা বাদ দিয়ে  সিলিন্ডারের চুলা নিয়ে আসি। রান্নাঘরে জায়গা কম হওয়ায় সিলিন্ডার গ্যাসের চুলাও আনতে পারছি না। একসঙ্গে তো দুটো চুলা বসানোর জায়গা নাই। নাখালপাড়ায়  থাকেন কাকলি আকতার। একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। স্বামী, দুই কন্যা সহ চারজনের সংসার তার। কাকলি বলেন- গ্যাস সংকটে আমার ওপর যেন আজাব যাচ্ছে। ফজরের সময় উঠে রান্না শুরু করি। কোন রকমে ভাত আর এক তরকারি হতে না হতেই গ্যাস নেই। কোনো রকমে দুপুরের খাবারের জোগান করি। সকালের নাস্তা বানানোর জো নেই। পাউরুটি, কলা, নসিলা, এসব দিয়ে নাস্তা চালাই। এই শীতের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির দিন একটু ঘুমাতে পারি না। শুক্র ও শনিবার পর্যন্ত গ্যাস থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন তো কলকারখানা, অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকে। তাহলে ছুটির দিন কেন গ্যাস থাকবে না এর জবাব চাই আমি তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে। খিলগাঁও, শাহজাদপুর, কুড়িল-বাড্ডা, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকাতেও গ্যাসের তীব্র সংকট। খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, গ্যাসের সংকট তো দিনে দিনে প্রকট আকার ধারণ করছে। যদি কোনো দিন সকালে একটু উঠতে দেরি হয় সেদিন দুপুরে ভাত খেতে হয় সন্ধ্যায়। এই শীতে সকালে একটু চা পর্যন্ত খাওয়া যায় না। নাস্তা খাওয়ার আগেই গ্যাস নেই। মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকাতে একই অবস্থা। মোহাম্মদপুরের টিক্কাপাড়া পানির পাম্প এলাকায় একটি মেসে থাকেন চঞ্চল। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার হোটেলেই খেতে হয় তাকে। চঞ্চল বলেন- আমাদের মেসে বুয়া রান্না করে। সে সকাল, দুপুর ও রাত তিনবেলার রান্না করতো। কিন্তু এখন তো গ্যাস থাকে না। এ জন্য সকাল ও দুপুরের রান্না করতে পারছে না। বিকালে এসে শুধু রাতের রান্না করে দেয়। আমাদের তো আর ফ্রিজ নেই যে, একদিনে বেশি করে রান্না করে পরের দিন সকালে খাবার গরম করে খাবো। খুবই খারাপ অবস্থা। একদিকে করোনার কারণে সরকার হোটেলে ভিড় করতে মানা করছে। অন্যদিকে গ্যাস না থাকলে মানুষ খাবে কি? বাংলামোটর, ইস্কাটন  এলাকায় আগে কখনো গ্যাসের সমস্যা না হলেও এবার শীতে গ্যাস থাকছে না। মতিঝিল, টিকাটুলি, স্বামীবাগ, গোপীবাগ, সায়েদাবাদ, দয়াগঞ্জসহ পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকায় গ্যাসের জন্য হাহাকার। অনেকেই বাধ্য হয়ে রাইস কুকার, ওভেন, ইলেকট্রিক কেতলি, সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছে। পুরান ঢাকানিবাসী মিন্টু বলেন, গ্যাসের বিল তো ঠিকই দিচ্ছি। তারপরও গ্যাস নেই। পানি গরম, ভাত রান্নার জন্য ইলেকট্রনিক মেশিন ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে যোগ হচ্ছে ইলেকট্রিকের বাড়তি বিলের চাপ। সবকিছুতেই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই। এদিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালক  (অপারেশন) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, শীতের সময় এমনিতেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। আর আশুগঞ্জে গ্যাস ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সমস্যা  হয়েছে। এ কারণে  লাইনে গ্যাস কম আসছে। কবে নাগাদ সংকট সমাধান হতে পারে জানতে চাইলে   সেলিম মিয়া জানান, সোমবার আমরা পেট্রোবাংলার সঙ্গে মিটিং করেছি। এখনো সঠিকভাবে বলতে পারছি না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর